নিরুত্তাপ মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার ভোট

বিজেপি ও কংগ্রেস
বিজেপি ও কংগ্রেস

ভারতের মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা রাজ্য নিশ্চিতভাবেই আবার ক্ষমতায় আসতে চলেছে শাসক বিজেপি। সর্বশেষ লোকসভা ভোটের পর বিজেপি-শাসিত এই দুই রাজ্য বিধানসভার ভোটেও স্থানীয় বিষয়কে ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে জাতীয়তাবাদের প্রশ্ন। লোকসভা ভোটে যেমন হয়েছিল, এই দুই রাজ্যের ভোট-প্রচারেও মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান, কাশ্মীর, জাতীয়তাবাদ এবং অবশ্যই নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্ব।

লোকসভা ভোটের পর এই প্রথম বোঝা যাবে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা কতটা অটুট রয়েছে। আজ সোমবার দুই রাজ্যেই ভোট হলো নির্বিঘ্নে যদিও ভোটারদের মধ্যে তুমুল আগ্রহ তেমন একটা লক্ষ করা যায়নি। বিকেল চারটা পর্যন্ত হরিয়ানায় ভোটের পরিমাণ ৫০ শতাংশ হলেও মহারাষ্ট্রে তা মাত্রই ৪৩ শতাংশ।

আশানুরূপ ভোট না পড়ার একটা কারণ হয়তো দুই রাজ্যের বিরোধীদের হতোদ্যম হাল। মহারাষ্ট্রে বিজেপি ও শিবসেনার জমাট জোটের মোকাবিলায় কংগ্রেস-এনসিপি জোট যথেষ্টই কমজোরি। আসন ভাগাভাগি নিয়ে শিবসেনার সঙ্গে মনোমালিন্য থাকলেও বিজেপি সেই তিক্ততা বাড়তে দেয়নি। ভোট-প্রচারের সময়েই তারা জানিয়ে দেয় উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ তারা শিবসেনাকে ছেড়ে দেবে। সেই পদে শিবসেনা বেছে নিয়েছে দলের সভাপতি উদ্ধব ঠাকরের ছেলে আদিত্য ঠাকরেকে। গত পাঁচ দশকে এই প্রথম ঠাকরে পরিবারের কেউ ভোটে দাঁড়ালেন। স্পষ্টতই, আদিত্যকে শিব সেনা গড়ে তুলছে ভবিষ্যতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে।

মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস ও এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্বে ভাঙনই যে শুধু ঘটেছে তা নয়, অধিকাংশই শাসক দলে যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। এই অবস্থায় আগ্রহ বিজেপি-সেনা জোট গতবারের তুলনায় বেশি আসন জিততে পারে কি না তা নিয়ে। রাজ্যের মোট আসন ২৮৮। এর মধ্যে ২১৭ আসন রয়েছে শাসক জোটের, কংগ্রেস-এনসিপির কাছে ৫৬টি। বিজেপি লড়ছে ১৫০ আসনে, শিব সেনা ১২৪টিতে। কংগ্রেস লড়াই করছে ১৪৬ আসনে, এনসিপি ১১৭টিতে। বিজেপি আগেই জানিয়ে দিয়েছে, জিতলে এবারও তাদের মুখ্যমন্ত্রী হবেন দেবেন্দ্র ফাডনবিশ।

হরিয়ানার মোট আসন ৯০। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সেখানে পাঁচ বছর নির্বিঘ্নে কাটালেন মনোহর লাল খাট্টার। জিতলে এবারও তিনিই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর মুখ। গত ভোটে বিজেপি জিতেছিল ৪৮ আসন, কংগ্রেস ১৭টি। এবার তাদের স্লোগান, ‘অব কি বার, পঁচাত্তর পার’।
ভোটের ঠিক আগেই অবশ্য হরিয়ানায় ইভিএম নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে গোল বাঁধিয়েছেন বিজেপির নেতা বকশিস সিং ভির্ক। নির্বাচনী প্রচারে এক ভাষণে তাঁর মন্তব্য হইচই ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার অত্যন্ত বুদ্ধিমান। ইভিএমে যে প্রতীকেই আপনারা বোতাম টিপুন না কেন ভোট পড়বে পদ্মফুলে।’ এই মন্তব্য নির্বাচন কমিশনকেও নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য করেছে। নির্বাচন কমিশন তাঁকে নোটিশ পাঠিয়েছে। বকশিস সিং ভির্ক যদিও বলেছেন ওই ভিডিও ভুয়া। তবে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ছেড়ে দেননি। টুইট করে তিনি বলেছেন, ‘ইনিই বিজেপির সবচেয়ে সৎ মানুষ।

দুই রাজ্যেই বিজেপির প্রচারে বড় হয়ে উঠেছে জাতীয়তাবাদ। পাকিস্তান, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল, কাশ্মীর প্রসঙ্গ ও মোদির বিপুল জনপ্রিয়তা শাসক দলের প্রচারে বড় হয়ে উঠেছে। এরই পাশাপাশি মারাঠা সংরক্ষণকে বিজেপি তার সাফল্য বলে প্রচার করেছে। পাশাপাশি বড় করে তুলে ধরেছে কংগ্রেসের অতীতের ‘দুর্নীতিকে’। কংগ্রেস ও এনসিপি এর মোকাবিলায় দেশের বেহাল অর্থনীতিকে বড় করে প্রচারে এনেছে। সেই সঙ্গে তুলে ধরেছে বেকারত্ব ও সার্বিক হতাশাগ্রস্ততাকে। প্রচার চলাকালীন পিএমসি ব্যাংকের অর্থ লুটও বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। দেখার বিষয়, কৃষক সমস্যা, বেহাল অর্থনীতি ও স্থানীয় ইস্যু ছাপিয়ে এবারেও জাতীয়তাবাদ ও নিরাপত্তার বিষয়টি দুই রাজ্যের মানুষ বেছে নেয় কি না। বিরোধীরা এই ক্ষেত্রে ভোটের ঠিক আগের দিন পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে হামলার ঘটনার উল্লেখ করছে। বলা হচ্ছে, ইচ্ছাকৃত এই হামলার উদ্দেশ্য ভোটে জেতা। লোকসভা ভোটের আগেও ঠিক এইভাবে বিজেপি বালাকোট স্ট্রাইক করে জাতীয়তাবাদের হাওয়া ছড়িয়েছিল।