সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীর জমকালো অভিষেক

সম্রাট নারুহিতো ও তাঁর স্ত্রী মাসাকো। অভিষেক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করেছেন সম্রাট নারুহিতো। রয়টার্স ফাইল ছবি।
সম্রাট নারুহিতো ও তাঁর স্ত্রী মাসাকো। অভিষেক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করেছেন সম্রাট নারুহিতো। রয়টার্স ফাইল ছবি।

জাপানের রাজধানী টোকিওর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সম্রাটের প্রাসাদে স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার বেলা ঠিক একটায় বেজে ওঠে ঢোল। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত সম্রাট নারুহিতোর অভিষেক অনুষ্ঠান। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, সংসদের দুই কক্ষের প্রধানেরা ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মূল অনুষ্ঠানকক্ষে নিজ নিজ আসনে গিয়ে বসেন। অন্য অতিথিরাও আসন গ্রহণ করেন। এর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় সম্রাটের অপেক্ষা।

বিদেশি অতিথিদের জন্য পাশের একটি কক্ষে বসানো বিশেষ টেলিভিশন পর্দায় পুরো অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। অনুষ্ঠানে যোগ দেন হাজার দুয়েক অতিথি।

মূল অনুষ্ঠানকক্ষ সাধারণভাবে রাষ্ট্রীয় কক্ষ নামে পরিচিত। সেইদেন-মাৎসু-নো মা নামে ওই কক্ষটির সামনের দিকের উঁচু অংশ নীল রঙের পর্দায় ঢেকে রাখা হয়। ষড়ভুজ আকারের দুটি মঞ্চ আগেই বসানো ছিল। দর্শকদের অবস্থান থেকে বাম দিকে রাখা মঞ্চটি দ্বিতীয় মঞ্চের চেয়ে কিছুটা উঁচু ছিল। সেখানেই ষড়ভুজ আকারের বেদির ওপর সম্রাটের সিংহাসন বসানো হয়। সেটার উচ্চতা প্রায় সাড়ে ছয় মিটার। পাশের সিংহাসনটি ছিল কিছুটা নিচু। সেটা সম্রাজ্ঞী মাসাকোর।

বেলা ঠিক একটায় সিংহাসনের পর্দা সরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীকে দেখা যায়। সম্রাটের ছিল রাজকীয় সাজসজ্জা। সম্রাজ্ঞী মাসাকো পরেছিলেন ১২ স্তরের চাকচিক্যময় রাজকীয় কিমোনো। সম্রাটের সিংহাসনের দুইদিকে দামি কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় রাখা ছিল সাম্রাজ্যের প্রতীক অলংকার হিসেবে বিবেচিত দর্পণ আর তলোয়ার। সিংহাসনের পর্দা খুলে দেওয়ার পর সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী উঠে দাঁড়ান। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সম্রাটের সামনে উপস্থিত হয়ে নত মস্তকে শ্রদ্ধা জানান। এর ঠিক পরপর গ্র্যান্ড চেম্বার তাঁর ভাষণ লেখা কাগজ সম্রাটের হাতে তুলে দেয়। এরপর সম্রাট সিংহাসন আরোহণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে ভাষণ দেন।

বক্তব্যে সম্রাট রাষ্ট্র ও জনগণের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বিশ্বজুড়ে শান্তি অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করবেন। ভাষণের শুরুতে তিনি তাঁর পিতা, বিদায়ী সম্রাট আকিহিতোর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, পিতার দেখিয়ে দেওয়া পথ ধরে তিনি এগিয়ে যাবেন।

সম্রাটের ভাষণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত ভাষণে সম্রাটকে অভিনন্দন জানান। তিনি সম্রাটের সুস্বাস্থ্য ও শান্তিপূর্ণ শাসনকাল প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, জাপানের জনগণ রাষ্ট্র ও জনতার ঐক্যের প্রতীক সম্রাটের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জাপানের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে কাজ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শেষ করে সম্রাটের দীর্ঘ জীবন কামনা করে তিনবার উচ্চকণ্ঠে বানজাই ধ্বনি দেন। এ সময় অতিথিরা তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মেলান। এর ঠিক পরপর কামানের ২১টি তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে শেষ হয় সিংহাসন আরোহণ অনুষ্ঠানের প্রথম অংশ। সিংহাসনের পর্দা আবারও নামিয়ে দেওয়া হলে সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী আসনের পেছনের অংশ দিয়ে কক্ষে নেমে তাতামি মাদুর পাতা একটি অংশে এসে দাঁড়ান। রাজ পরিবারের অন্য সদস্যরা পেছনের দিকে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।

এর আগে সকাল নয়টায় সম্রাট নারুহিতো ও সম্রাজ্ঞী মাসাকো প্রাসাদ চত্বরে অবস্থিত মন্দিরে গিয়ে পূর্বপুরুষদের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রার্থনা করেন। সিংহাসন আরোহণ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে মোটরগাড়ি শোভাযাত্রা ছিল। তবে গত সপ্তাহে সামুদ্রিক ঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতির কথা বিবেচনা করে সেটি নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজকের পরবর্তী অনুষ্ঠান হচ্ছে সন্ধ্যার রাজকীয় ভোজসভা। সম্রাটের প্রাসাদে নির্ধারিত সেই অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের পাশাপাশি জাপানের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও যোগ দেবেন।