ভারতীয় ঘোষণা না করা পর্যন্ত লাশ নেবে না পরিবার

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আসামের বন্দিশিবিরে মারা যাওয়া এক ব্যক্তিকে ভারতীয় ঘোষণা না করা পর্যন্ত পরিবার লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মারা যাওয়া ব্যক্তিকে ‘বাংলাদেশি’ বলছে কর্তৃপক্ষ।

মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম ফালু দাস (৭০)। তাঁর পরিবার বলছে, জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) নামে ফালু দাসকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তিনি ভারতীয়। ফালু দাসকে ভারতীয় ঘোষণা না করা পর্যন্ত তাঁর লাশ গ্রহণ করবে না পরিবার।

আসামে বিদেশি তকমা দিয়ে বন্দী করা হয়েছে বহু বাঙালি হিন্দু-মুসলিমকে। তাঁদের অনেককেই রাখা হয়েছে আসামের ছয়টি কারাগারে স্থাপিত বিশেষ বন্দিশিবিরে। বন্দিশিবিরগুলোতে ইতিমধ্যে ২৭ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবশেষ ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার।

আসামের রাজধানী গুয়াহাটির মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফালু দাসের লাশ রয়েছে। ফালু দাসের পরিবার থেকে দাবি তোলা হয়েছে, তাঁকে ভারতীয় হিসেবে ঘোষণা না করা পর্যন্ত সৎকারের জন্য তারা মৃতদেহ নেবে না। যেহেতু তাদের বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হয়েছে, তাই ওই মৃতদেহ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হোক।

গোয়ালপাড়া বন্দিশিবিরে বন্দী ছিলেন ফালু দাস। ফালু দাসের বাড়ি নলবাড়ি জেলার সাতেমারি গ্রামে। ২০১৭ সালে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার করে রাখা হয় ওই বন্দিশিবিরে।

ফালু দাস পেশায় মৎস্যজীবী ছিলেন। নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দুই ছেলে, চার মেয়েসহ পরিবারে সদস্যসংখ্যা ১৫ জন। এর মধ্যে শুধু দুই মেয়ের নাম এনআরসিতে উঠেছে। ১৩ জন বাদ পড়েছেন তালিকা থেকে।

ফালু দাসের বড় ছেলে জগদাস বলেছেন, তাঁরা তাঁদের বাবার মরদেহ নেবেন না। যদি নিতেই হয়, তবে তাঁদের পরিবারকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। নইলে ওই মৃতদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হোক বাংলাদেশে। কারণ, আসাম সরকরের খাতায় তাঁর বাবা ‘বাংলাদেশি’।

আসামে বন্দিশিবিরগুলো রয়েছে তেজপুর, গোয়ালপাড়া, শিলচর, ডিব্রুগড়, কোকড়াঝাড় ও জোরহাট জেলায়। এর মধ্যে তেজপুরে ১০ জন, গোয়ালপাড়ায় ১১ জন, শিলচরে ৩ জন, কোকড়াঝাড়ে ২ জন ও জোরহাটে একজন মারা গেছেন। ২৭ জনের মধ্যে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এর আগের দফায় বিজেপির শাসনামলে। মৃতের তালিকায় ১৩ জন হিন্দু ও ১৩ জন মুসলিম। আর একজন অন্য সম্প্রদায়ের।

গতকাল শনিবার রাতে আসামের মানবাধিকার সংগঠন ‘আমরা বাঙালি’র সচিব ও আসামের নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সচিব প্রধান সাধন পুরকায়স্থ প্রথম আলোকে বলেন, আসাম এখন মানবতার বধ্যভূমি। এই সরকার অমানবিক। আসামের ছয়টি বন্দিশিবিরে না খেয়ে ও কারারক্ষীদের জুলুমের শিকার হয়ে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ জন্য দায়ী আসামের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সদানন্দ সনোয়াল। রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষকে ‘বিদেশি’ বানিয়ে হত্যা করছে। তিনি বন্দিশিবিরে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।