কাশ্মীর থেকে কলকাতায় ফিরে এলেন ১৩৮ শ্রমিক

কাশ্মীর থেকে ফিরে আসা শ্রমিকেরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কাশ্মীর থেকে ফিরে আসা শ্রমিকেরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এলেন ১৩৮ শ্রমিক। এর মধ্যে ১৩৩ জনই পশ্চিমবঙ্গের। ৫ জন আসামের। কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় পশ্চিমবঙ্গের ৫ শ্রমিক নিহত হওয়ার পর এসব শ্রমিক রাজ্য সরকারের কাছে তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানান। এর পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। ব্যবস্থা করেন বিশেষ ট্রেনের। সেই ট্রেনে চেপে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতা স্টেশনে পৌঁছান শ্রমিকেরা।

শ্রমিকদের বহনকারী জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস ট্রেনটি কলকাতা স্টেশনে পৌঁছালে কলকাতার মেয়র ও পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তাঁদের অভ্যর্থনা জানান। এরপর এই শ্রমিকদের ৫টি সরকারি বাসে করে নিজ এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় রাজ্য পরিবহন দপ্তর।

গত মঙ্গলবার জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিদিনের মতো সেদিন শ্রমিকেরা নির্মাণকাজ করছিলেন দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাঁওয়ের কাটারসু গ্রামে। জঙ্গিরা এ সময় হঠাৎ চড়াও হয় ওই শ্রমিকদের ওপর। তাঁদের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যান পাঁচ শ্রমিক। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের লাশ উদ্ধার করে। রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজি) দিলবাগ সিং অভিযোগ করেন, জঙ্গি হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদ রয়েছে।

জঙ্গি হামলায় নিহত পাঁচ বাঙালি শ্রমিক হলেন কামরুদ্দিন শেখ, মুর্শিনাম শেখ, রফিক আহমেদ শেখ, নইমুদ্দিন ও রফিকুল আলম। এই শ্রমিকেরা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার ব্রাহ্মণী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

ফিরে আসা ১৩৮ জন শ্রমিকের মধ্যে ৫ জন আসামের। অন্যরা পশ্চিমবঙ্গের। পশ্চিমবঙ্গের ১৩৩ জন শ্রমিকের মধ্যে ১১২ জন দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা। অন্যরা উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, বীরভূম ও মালদার বাসিন্দা। রাজ্য সরকার ফিরে আসা এসব শ্রমিকের যাতে দ্রুত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়, সেই লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

শুধু এঁরাই নন, আরও বহু শ্রমিক রুটিরুজির তাগিদে কাশ্মীরে কাজ করেন। এঁরা সাধারণত আপেল বাগানের পরিচর্যা, কাঠমিস্ত্রি, নির্মাণশিল্প ও বিভিন্ন পশমশিল্পে কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং উত্তর দিনাজপুরের বহু শ্রমিক এখনো কাজ করছেন কাশ্মীরে।

সম্প্রতি জঙ্গিদের হামলায় পাঁচ বাঙালি শ্রমিক নিহত হওয়ার পর কাশ্মীরে কর্মরত বাঙালি শ্রমিকদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বহু শ্রমিকই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানান, তাঁদের যেন কাশ্মীর থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় বাংলায়। কাশ্মীরের বাঙালি শ্রমিকদের ডাকে সাড়া দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেন তিনি।

ঘটনার পর মমতা বলেছেন, এই রাজ্যের বাঙালি শ্রমিকদের আর কাশ্মীরে রাখা হবে না। তাঁদের এই রাজ্যে ফিরিয়ে এনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। কাশ্মীর থেকে বাঙালি শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের দুই শীর্ষ পুলিশ কর্তাকেও কাশ্মীরে পাঠিয়েছিলেন। মমতা বলেছেন, কাশ্মীরের এই শ্রমিক হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত।