বাগদাদির বোনের পর স্ত্রী আটক

জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি। ছবি: এএফপি
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি। ছবি: এএফপি

আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সাবেক প্রধান আবু বক্কর আল-বাগদাদির বোনের পর এবার ধরা পড়ল স্ত্রী। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়েপ এরদোয়ান এ তথ্য জানান বলে বিবিসির খবরে বলা হয়।

রাজধানী আঙ্কারায় এরদোয়ান বলেন, প্রথমবারের মতো তিনি বাগদাদির স্ত্রীকে ধরার বিষয়টি প্রকাশ করছেন।

বাগদাদির আত্মহত্যার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এরদোয়ান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে বাগদাদি একটি সুড়ঙ্গে আত্মঘাতী হন। এরপর তারা এ বিষয়ে বিশ্ববাসীকে জানাতে শুরু করে।

কিন্তু তাঁর স্ত্রীকে আটকের খবরটি আমি প্রথম জানাচ্ছি। এবং এটা নিয়ে তাদের মতো হইচই শুরু করিনি। একইভাবে আমরা সিরিয়া থেকে বাগদাদির বোন ও বোনের স্বামীকে ধরেছি।

গত সোমবার সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর আজাজে অভিযান চালিয়ে বাগদাদির বোন রাসমিয়া আওয়াদ (৬৫), তাঁর স্বামী ও ননদকেও আটক করে তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনী হয়। তুরস্কের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তুরস্কের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, তুরস্কের সীমান্তের পাশেই সিরিয়ার শহর আজাজ। শহরটি বর্তমানে তুরস্কের সেনাদের দখলে। রাসমিয়াকে আটক করার সময় তাঁর পাঁচ সন্তানও ছিল।

গত ২৬ অক্টোবর সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের এক গ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনীর অভিযানের মুখে আত্মঘাতী হন বাগদাদি। অনলাইনে অডিও বার্তা পাঠিয়ে তাঁর মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে আইএস।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ইদলিব প্রদেশের একটি সুড়ঙ্গে মার্কিন সেনা অভিযানে বাগদাদি নিহত হয়েছেন। অভিযানের সময় বাগদাদি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। ওই সময় সেখানে চিৎকার ও কান্নার শব্দ শোনা যায়। বাগদাদির সঙ্গে তাঁর ছেলেমেয়েরাও ছিলেন। আত্মঘাতী বিস্ফোরণে তারাও নিহত হন। বিস্ফোরণের পর বাগদাদির দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

মার্কিন সেনাবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি বলেন, অভিযানের পর মার্কিন সেনারা হামলা চালিয়ে এলাকাটি ধ্বংস করে দেয়। এটি দেখতে বড় বড় গর্তে ভরা পার্কিং লটের মতো লাগছিল।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে বাগদাদির ‘কান্নাকাটি ও লাফালাফির’ আওয়াজ পাওয়া গেছে। এই দাবি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘বাগদাদির শেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে আমি এটুকু বলতে পারি, তিনি ছোট দুটি বাচ্চা নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। সহচরদের উপস্থিতিতেই নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।’ তিনি বলেন, খুব সম্ভবত বাগদাদি শেষ মুহূর্তে সুড়ঙ্গ থেকে গুলি চালিয়েছিলেন। বাগদাদি এবং দুই শিশু ছাড়াও ওই অভিযানে চারজন নারী ও অন্য এক ব্যক্তি মারা যান।

২০১৪ সালে সরকারি বাহিনীগুলোর কাছ থেকে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল এলাকা দখলে নিয়ে আইএসের খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন বাগদাদি। সেই খেলাফতের স্বঘোষিত খলিফা ছিলেন বাগদাদি। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ইরাকের কোবান শহরের নিয়ন্ত্রণ হারানোর মাধ্যমে আইএসের খিলাফতের পতন হতে শুরু হয়। সেই পতনের শেষ হয় চলতি বছরের মার্চে সিরিয়ার বাঘৌজ হারানোর মধ্য দিয়ে।

বাগদাদির নিহত হওয়ার পর তাঁর উত্তরসূরি নিয়োগ করা হয়েছে আবু ইব্রাহিম আল-হাশিমি আল-কুরেইশিকে। বাগদাদির নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বনেতারা প্রশংসা করলেও সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তার জন্য আইএস এখনো হুমকি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।