বুলবুলে পশ্চিমবঙ্গে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ৪ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ৬০ হাজার। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ৪ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ৬০ হাজার। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

গতকাল রোববার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ৭ জন মারা গেছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। বেশির ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে গাছচাপায়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, ঝড়ে বাড়িঘর ভেঙে ও দেয়াল চাপা পড়ে ।

ঝড়ের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। চব্বিশ পরগনায় যেমন রয়েছে সুন্দরবন, বকখালী সমুদ্র পর্যটনকেন্দ্র, তেমনি পূর্ব মেদিনীপুরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সেরা সমুদ্র পর্যটনকেন্দ্র দিঘা, মন্দারমণি।

বুলবুলে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায়। এখানে পাঁচজন নিহত হন। এ ছাড়া পূর্ব মেদিনীপুরে ৩, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় ২ ও কলকাতায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সরকারি হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ৪ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ৬০ হাজার। ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে ৪৭১টি। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার মানুষকে। সেখানে রান্নাঘর তৈরি করা হয়েছে ৩২৩টি। এই বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুতের ৬৬টি সাবস্টেশন। ২ হাজার মোবাইল টাওয়ার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত একর চায়ের জমি। ডুবে গেছে প্রচুর ফসল। মারা গেছে বহু গবাদিপশু। ক্ষতি হয়েছে প্রচুর পানখেত। বহু এলাকার বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। উড়ে গেছে বাড়ির চাল।

ফ্রেজারগঞ্জে নোঙর করে থাকা ৪টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবেছে। ওই ট্রলারে অবস্থান করা এক মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে। এখনো নিখোঁজ আছেন ৮ জন মৎস্যজীবী। সরকার প্রতিটি ট্রলারকে নিরাপদ স্থানে নোঙর করার নির্দেশ দিলেও ট্রলার মালিকেরা ট্রলারের মৎস্যজীবীদের ট্রলার রক্ষার জন্য ছুটি দেননি। তাঁরা অনেকেই বাধ্য হয়ে ঝড়ের মধ্যে ট্রলারে অবস্থান করছিলেন।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার অন্যতম সমুদ্র পর্যটনকেন্দ্র বকখালী তছনছ হয়ে গেছে। এখানের দোকানপাট উড়ে গেছে। ঝড়ের কবলে পড়ে এখানে একটি ট্রলারও ডুবে গেছে।

এখনো দুর্গত এলাকার বহু স্থানে বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। অনেক স্থানে পড়ে আছে বিদ্যুতের খুঁটি। রাস্তাঘাটে প্রচুর গাছপালা ভেঙে সড়ক চলাচল ব্যাহত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার নদী বাঁধ। দুর্গত এলাকায় উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। রাস্তায় পড়া গাছ সরানো হচ্ছে। উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১০টি টিম, রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৬টি টিম, কলকাতা পুলিশের উদ্ধারকারী দল এবং সেই সঙ্গে উপকূল রক্ষীবাহিনী এবং নৌবাহিনীর সদস্যরা। আজ সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাকদ্বীপ যাচ্ছেন দুর্গত এলাকা পরিদর্শনের জন্য।

গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বুলবুল পশ্চিমবঙ্গে আঘাত করে। এ সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম আঘাত করে সুন্দরবন অঞ্চলের বকখালী এবং সাগরদ্বীপে। তবে সুন্দরবন থাকায় এই ঝড়ের তাণ্ডব রক্ষা করেছে।