মোদির মন্ত্রিসভা থেকে শিবসেনার মন্ত্রীর পদত্যাগ, মহারাষ্ট্রে অচলাবস্থা

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে জোটসঙ্গী শিবসেনার চরম দ্বন্দ্বের মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে শিবসেনার মন্ত্রী অরবিন্দ সাওয়ান্ত পদত্যাগ করলেন। আজ সোমবার সকালে সাওয়ান্তের এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে শিবসেনা দৃশ্যত বহুদিনের বন্ধু বিজেপির সঙ্গ ছাড়ল। এতে মহারাষ্ট্রে এনসিপি ও কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে শিবসেনার সরকার গঠনের সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হলো। হিন্দুস্তান টাইমস ও এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজেপি ও শিবসেনার মধ্যে জোটের সম্পর্ক প্রায় ২৫ বছরের। মহারাষ্ট্রের সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা নির্বাচনেও একসঙ্গে লড়াই করে শিবসেনা-বিজেপি জোট। ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, বিজেপি আসন পেয়েছে ১০৫টি আর শিবসেনা পেয়েছে ৫৬টি। মহারাষ্ট্র বিধানসভার মোট আসন ২৮৮। বিজেপি-সেনা মিলিয়ে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য এ জোটের আসন প্রয়োজনীয় ১৪৫-এর বেশিই ছিল।

এর পরও ক্ষমতা ভাগাভাগিতে একমত না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনে অপারগ হয় বিজেপি-শিবসেনা জোট। এবারের নির্বাচনে মহারাষ্ট্রের আঞ্চলিক দল এনসিপি ৫৪ ও কংগ্রেস ৪৪ আসন পায়। এ পরিস্থিতিতে বিজেপি জানিয়ে দেয়, মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করবে না তারা। গতকাল রোববার ছিল সরকার গঠনের শেষ সময়। এরপর শিবসেনাকে সরকার গড়ার আহ্বান জানান রাজ্যপাল। শিবসেনা আগে থেকেই এনসিপি ও কংগ্রেসের সমর্থনে সরকার গঠনের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিল।

মহারাষ্ট্রে শিবসেনার নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হবে কি না, তা নিয়ে এখন দেশীয় রাজনীতিতে জল্পনা তুঙ্গে। রাজ্যে সরকার গঠনের বিষয়ে শিবসেনা-বিজেপি মতবিরোধের মধ্যে কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল উদ্ধব ঠাকরের দল। কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে নিজেদের একমাত্র মন্ত্রী সাওয়ান্তকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে অনেকেই জল্পনা করছেন, এর মাধ্যমে আসলে এনসিপিপ্রধান শারদ পাওয়ারকে বন্ধুত্বের বার্তা দিল শিবসেনা। মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের জন্য যেকোনো জোটের বিষয়ে আলোচনা করতে পাওয়ারের দেওয়া অন্যতম একটি শর্ত পূরণ করল শিবসেনা। মনে করা হচ্ছে, এনসিপির সমর্থন নিয়ে সে রাজ্যে সরকার গঠনের লক্ষ্যে নিজের দলের বিধায়কদের নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছে শিবসেনা। অন্যদিকে দিল্লিতে বিষয়টি নিয়েই এক বিশেষ বৈঠকে বসেছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।

আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে শিল্পমন্ত্রী অরবিন্দ সাওয়ান্ত টুইট করেন, ‘শিবসেনা সব সময়ই সত্যের দিক বেছে নিয়েছে। তাহলে এ রকম মিথ্যার পরিবেশে কেন আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে থাকব? সেই কারণেই আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।’

শিবসেনাপ্রধান উদ্ধব ঠাকরে আজ শারদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, শিবসেনার তরফ থেকে মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী পদের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে এনসিপিকে। তবে মুখ্যমন্ত্রী পদ থাকবে শিবসেনার দখলেই।

শিবসেনার সঙ্গে সরকার গড়া নিয়ে কোনো রফাসূত্রে আসার আগে এনসিপির পক্ষ থেকে তাঁদের এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার শর্ত দেওয়া হয়। সেই শর্ত অনুযায়ীই এনডিএ ছাড়ে উদ্ধব ঠাকরের দল।
আজ এনসিপি নেতা নবাব মালিক বলেন, শিবসেনা যদি কংগ্রেস এবং এনসিপির সমর্থন চায়, তবে তাঁদের অবশ্যই ঘোষণা করতে হবে। তাদের বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে এবং এনডিএ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মালিক অবশ্য জানান, শিবসেনার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত সরকার গঠন নিয়ে কোনো প্রস্তাব আসেনি।

শিবসেনার মুখপত্র সামনায় গত সপ্তাহেই বলা হয়, ‘এনসিপির ৫৪ জন, কংগ্রেসের ৪৪ এবং কয়েকজন নির্দল বিধায়ককে নিয়ে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পৌঁছতে পারি। সেনা নিজেদের দল থেকে একজনকে মুখ্যমন্ত্রী পদে উপস্থাপন করতে পারে। তবে তার জন্য তিনটি দলেরই স্বাধীন মতাদর্শের সঙ্গে মেলে এবং সর্বজনগ্রাহ্য, এমন নীতি অবলম্বন করা উচিত ।

তবে শারদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠকে কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী শিবসেনাকে সমর্থন করার বিষয়ে সম্মতি দেননি। জানা গেছে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আজ আবার বৈঠকে বসছেন কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা। ওই বৈঠকেই ঠিক হবে যে দলটি সেনা-এনসিপি সরকারকে সমর্থন করবে কি না। শিবসেনা নেতৃত্বাধীন সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থনের কথা ভাববে কংগ্রেস।