মনের আগুন থেকে বনে আগুন

অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিবছর প্রায় ৫৪ হাজার দাবানলের ঘটনা ঘটে। ছবি: রয়টার্স
অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিবছর প্রায় ৫৪ হাজার দাবানলের ঘটনা ঘটে। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়া দাবানলের ঝুঁকিতে থাকা একটি দেশ। বিবিসি বলছে, প্রতিবছর দেশটিতে কমবেশি ৫৪ হাজার দাবানলের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের এসব ঘটনায় দেশটির কয়েকটি অঞ্চল বিপর্যস্ত। তবে বিস্ময়কর তথ্য হলো, দাবানলের অনেক ঘটনা অস্ট্রেলিয়ার মানুষের কারণে ঘটে। এসব মানুষ ইচ্ছা করেই এই আগুন লাগান। তা হতে পারে মনের ভেতর জ্বলতে থাকা কোনো আগুন থেকে কিংবা এর পেছনে কোনো কারণ না-ও থাকতে পারে।

সম্প্রতি এ-বিষয়ক দুটি সমীক্ষার তথ্য উল্লেখ করে বিবিসি বলছে, অস্ট্রেলিয়ায় যে ৫৪ হাজার দাবানলের ঘটনা ঘটে, এর মধ্যে ১৩ শতাংশই স্বেচ্ছায় লাগানো আগুন। ৩৭ শতাংশ ঘটনা ‘সন্দেহজনক’ বলে বিবেচিত।

অবশ্য অস্ট্রেলিয়াস ন্যাশনাল সেন্টার ফর রিসার্চ এই বুশফায়ার অ্যান্ড আরসনের উপপরিচালক পল রেডের মতে, প্রতিবছর প্রায় ৬২ হাজার দাবানলের ঘটনা ঘটে এবং দিনে দিনে তা আরও বেড়ে চলেছে। তবে সংখ্যা যা-ই হোক, প্রশ্ন হলো, কেন দাবানলের মতো বিধ্বংসী ঘটনা মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে করে?

পল রেড বলছেন, অস্ট্রেলিয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে লাগানো দাবানালের অর্ধেকেরও বেশি ঘটে থাকে ২১ বছরের নিচে বয়সীদের মাধ্যমে। এই দলের মধ্যে থাকে সেই শিশুরা, যারা প্রথমে আগুন নিয়ে খেলা শুরু করে, পরে আর তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে না। অন্যদিকে, মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত কিছু শিশু-কিশোরের মাধ্যমেও এই ঘটনা ঘটে থাকে।

তবে শিশু-কিশোরদের থেকেও বড় বয়সীদের আগুন লাগানোর পেছনের কারণগুলো আরও বেশি বিস্ময়কর।

পল রেড বলেন, ২৮ বছরেরও বেশি বয়সী একদল অস্ট্রেলীয় আছে, যারা আগুন লাগানোর মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে যাকে বলা হয় ‘সাইকো-সেক্সুয়াল ফ্যাসিনেশন’।

রেডের মতে, এসব মানুষ কোনো কার্যকারণ ছাড়াই কোনো আগুন লাগায়। অন্তত পরিসংখ্যান তা-ই বলে। বরং ২৮ বছরের নিচে একদল ও ৩০ বছরের ওপরে একদল মানুষ বেশি আগুন লাগিয়ে থাকে। এই দুই দলের লোকেরা দাবানলের মৌসুমে আগুন লাগানোর কাজ করে থেকে। কারণ এই সময় লাগানো আগুনের উৎস খুঁজে পাওয়াটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।

অনেকে চাকরিচ্যুত বা প্রেমে ব্যর্থ হয়েও দাবানলের ঘটনা ঘটান।

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের এক পুলিশ কর্মকর্তা ১৬ বছর বয়সী এক ছেলেকে আগুন লাগানোর দায়ে আটক করেন। এরপর ওই পুলিশ অফিসার দুঃখ করে বলেন, ইচ্ছাকৃত ভাবেই অনেক ভগ্নহৃদয়ের মানুষ দাবানল ছড়িয়ে দিচ্ছে।

অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যম এবিবিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক ব্যক্তি জানিয়েছিলেন, প্রেমিকা অন্যের সঙ্গে কথা বলছে দেখে রাগে তিনি দাবানলের ঘটনা ঘটান।

পল রেড বলেন, মাঝেমধ্যে প্রান্তিক মানুষ সমাজের ওপর ক্ষোভ ঝাড়তে দাবানল ছড়িয়ে থাকেন। তবে রেডের মতে, কিছু লোক আছে যারা আগুন লাগায় শুধুই মনের আনন্দে। তিনি বলেন, চোখের সামনে টকটকে লাল আগুন সবকিছু পুড়িয়ে দিচ্ছে, এটাই দেখেই তারা প্রকৃত অর্থেই সুখ পায়।

তবে এসব লোকের বাইরেও অনেক সময় ফায়ার সার্ভিসের লোকেরাই মাঝেমধ্যে দাবানলের ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। ২০০৯ সালে এমন একটি ঘটনায় প্রায় ১৭৩ জন মানুষ মারা গিয়েছিল।