হংকংয়ে সামরিক হস্তক্ষেপে যাচ্ছে চীন?

গত কয়েক সপ্তাহ হংকংয়ের বিক্ষোভ বেশি সহিংস হয়ে উঠেছে। ছবি: রয়টার্স
গত কয়েক সপ্তাহ হংকংয়ের বিক্ষোভ বেশি সহিংস হয়ে উঠেছে। ছবি: রয়টার্স

হংকংয়ের সড়কগুলোয় বিছিয়ে রাখা ইট-পাথর ও ব্যারিকেড তুলে রাস্তা পরিষ্কার করেছেন টি–শার্ট আর হাফপ্যান্ট পরা একদল যুবক। পরে জানা যায়, সড়ক অবরোধে বিক্ষোভকারীদের ফেলে রাখা জিনিসপত্র অপসারণ করা ওই যুবকেরা চীনের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সদস্য। টানা ছয় মাস গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভে অচল হংকং। দিন দিন সেই সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে চীনা সেনাদের রাস্তায় নামার ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, চীন কি তাহলে হংকংয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছে? 

গত কয়েক সপ্তাহ হংকংয়ের বিক্ষোভ বেশি সহিংস হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে গত শনিবার হংকংয়ের রাজপথে দেখা যায় চীনের সেনাদের। তবে তাঁদের সঙ্গে ছিল না কোনো সাঁজোয়া যান বা ভারী অস্ত্রশস্ত্র। সাধারণ পোশাকে বেশ শান্তশিষ্ট ও শৃঙ্খলভাবে খালি হাতে বিক্ষোভকারীদের অবরোধ অপসারণ করেন তাঁরা। তাঁদের সেই কাজের দৃশ্য ধারণ করেন স্থানীয় সাংবাদিক ও পথচারীরা। পরে পিএলএ জানায়, কাউলুন টং এলাকায় তাদের ব্যারাকগুলোর সামনের অবরুদ্ধ সড়ক খুলে দিতেই সেনারা কাজ করেন। 

তবে প্রশ্ন রয়েছে, চীনের সেনারা হংকংয়ের সড়কে নামার কোনো সুযোগ রয়েছে কি না? ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্য থেকে হংকং চীনের শাসনভুক্ত হয়। সেই থেকেই ‘এক চীন, দুই পদ্ধতি’ নীতিতে পরিচালিত হয়ে আসছে চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চলটি। স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হওয়ার কারণে হংকংয়ের বেসিক লতে (সংবিধান) বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা থাকবে। পিএল হংকংয়ের সামরিক ঘাঁটিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ পাবে। তবে শহরে অবস্থানরত সেনারা স্থানীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। বেসিক লর ১৪ ধারায় বলা আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সহায়তা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সেনা চাইতে পারে হংকং প্রশাসন। তবে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে অস্থির অবস্থা ও যুদ্ধাবস্থার সময় হংকংয়ের সেই আইন স্থগিত করার সুযোগ কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়া হয়েছে ১৮ ধারায়।

হংকং সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, কর্তৃপক্ষ সেনা সহায়তা চায়নি। তাঁরা স্বেচ্ছায় সড়ক পরিষ্কারের কাজ করেছেন।

হংকংভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক উইলি লাম বলেন, সেনাদের সড়ক পরিষ্কারের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করে। তাঁরা একদিকে যেমন খুবই শান্তশিষ্ট ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে কাজ করেছেন, অন্যদিকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, যেকোনো সময় তাঁরা আরও বড় কাজে যুক্ত হতে প্রস্তুত।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত সপ্তাহে এক বিরল বিবৃতিতে হংকংয়ের অস্থিরতা থামানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ কিয়ান গতকাল সোমবার প্রেসিডেন্ট সি কথা পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, হংকংয়ে সেনা ঘাঁটির দায়িত্ব হংকংয়ের সার্বভৌমত্ব ও উন্নতির স্বার্থ রক্ষা করা।