সব ছাপিয়ে আলোচনায় কনজারভেটিভের টুইটার প্রতারণা

বরিস জনসন ও জেরেমি করবিন
বরিস জনসন ও জেরেমি করবিন

নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা বরিস জনসন ও প্রধান বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের প্রথম টিভি বিতর্কে ব্রেক্সিট, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা এবং রাজনীতিতে সততার গুরুত্বসহ নানা বিষয়ে উত্তপ্ত লড়াই হয়েছে। কিন্তু বিতর্কে কে ভালো করলেন, সেই মূল্যায়ন ছাপিয়ে আলোচনা দখল করে নিয়েছে কনজারভেটিভ পার্টির টুইটার প্রতারণা।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাতে আইটিভি দেশের সম্ভাব্য দুই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর এই বিতর্ক সম্প্রচার করে। বিতর্ক চলাকালীন ডানপন্থী কনজারভেটিভ পার্টির প্রচার বিভাগের (প্রেস অফিস) টুইটার অ্যাকাউন্টের নাম বদল করে ‘ফ্যাক্ট চেক ইউকে’ করা হয়। বিতর্কে করবিনের দেওয়া বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমাণের কাজে লাগানো হয় এই অ্যাকাউন্ট। বিতর্ক চলাকালীন বিষয়টি ধরা পড়ে এবং এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

যুক্তরাজ্যে রাজনীতিকদের বক্তব্যের সত্যতা মূল্যায়নে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ‘রিয়েলিটি চেক’ বা ‘ফ্যাক্ট চেক’ শিরোনামে প্রকৃত তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বক্তব্যের সত্য-মিথ্যা তুলে ধরে। ‘ফ্যাক্ট চেক’ নামে প্রকৃত যে টুইটার অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তারা কনজারভেটিভের টুইটারের নাম বদল–কাণ্ডকে প্রচারণা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। আর টুইটার কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টের নাম বদল করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা অগ্রহণযোগ্য। ভবিষ্যতে এমন কাণ্ড করলে তারা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। দুই নেতার আলোচনাজুড়েই ছিল কনজারভেটিভের টুইটার প্রতারণা।

মঙ্গলবারের বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) কার্যকর করা নিয়ে পার্লামেন্টের অচলাবস্থা নিরসনের জন্যই এই নির্বাচন। লেবার পার্টি ক্ষমতায় গেলে ব্রেক্সিট নিয়ে অচলাবস্থা এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও দীর্ঘায়িত হবে।

বিপরীতে বাম ধারার রাজনীতিক লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেন, ক্ষমতায় গেলে ইইউর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ঠিক রেখে নতুন চুক্তি করবেন এবং ছয় মাসের মধ্যে পুনরায় গণভোটের আয়োজন করবেন, যেখানে ওই চুক্তির মাধ্যমে বিচ্ছেদ হবে, নাকি যুক্তরাজ্য ইইউতে থেকে যাবে, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারবে জনগণ। কিন্তু সেই গণভোটে করবিন ব্রেক্সিটের পক্ষে থাকবেন, নাকি বিপক্ষে থাকবেন, বারবার এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে করবিনকে বিব্রতকর পরিস্থিতে ফেলার চেষ্টা করেন জনসন। এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে করবিন বলেন, কয়েক মাসের মধ্যে ব্রেক্সিট কার্যকরের যে কথা জনসন বলছেন, সেটি ফাঁকা বুলি। বাস্তবে কয়েক বছরেও ব্রেক্সিট কার্যকর করা সম্ভব নয়।

ব্রেক্সিট যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি এবং জীবনমানের জন্য ধ্বংসাত্মক হবে উল্লেখ করে করবিন বলেন, ব্রেক্সিটের ক্ষতি পোষাতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাতকে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে দিতে চান জনসন। অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন জনসন।

যুক্তরাজ্যের রাজ প্রথা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে করবিন বলেন, রাজতন্ত্রের কিছুটা উন্নয়ন সাধনের প্রয়োজন আছে। আর জনসন বলেন, রাজপরিবার বিতর্কের ঊর্ধ্বে। ১৭ বছর বয়সী মার্কিন তরুণীর সঙ্গে যৌনাচারের দায়ে অভিযুক্ত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছোট ছেলে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিষয়ে করবিন বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত নয়। আর জনসন ভুক্তভোগীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশেই জবাব সীমাবদ্ধ রাখেন।

উত্তপ্ত এই বিতর্কে সৌহার্দ্য ফিরিয়ে আনতে উপস্থাপিকা জানতে চান—দুই নেতা বড়দিনে পরস্পরকে কী উপহার দেবেন? জবাবে করবিন বলেন, বড়দিনে তিনি জনসনকে চার্লস ডিকেন্সের লেখা ‘ক্রিসমাস ক্যারোল’ উপহার দেবেন। আর জনসন বলেন, তিনি বড়দিনের উপহার হিসেবে তাঁর ব্রেক্সিট চুক্তির একটি অনুলিপি করবিনকে দিতে চান। দুই নেতা রাজনীতিতে বিদ্বেষ হ্রাস এবং সংসদে শালীন পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন।

বিবিসির রাজনীতিবিষয়ক সম্পাদক লরা কুয়েন্সবার্গ বলেন, সাধারণত টিভি বিতর্কে নেতাদের পারফরম্যান্স জনজরিপে প্রভাব ফেলে। কিন্তু এই বিতর্কের পর এমন কিছু দৃশ্যমান হয়নি। জরিপে করবিনের চেয়ে ১০ শতাংশের বেশি ব্যবধানে এগিয়ে আছেন জনসন।