দীর্ঘ সময়ের সরকারপ্রধান শিনজো আবে কতটা সফল

শিনজো আবে। ছবি: রয়টার্স
শিনজো আবে। ছবি: রয়টার্স

সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনকারী জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে কতটুকু সফল, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। অর্থনীতিকে মন্থর অবস্থা থেকে বের করে এনে আবারও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১২ সালে ক্ষমতায় আসেন শিনজো আবে। ‘আবেনোমিকস’ নামে পরিচয় দেওয়া অর্থনীতির নতুন কিছু দিকনির্দেশনা দেখিয়েছিলেন তিনি। তবে আট বছর পর এসে তাঁর শাসনামলের ময়নাতদন্ত করলে দেখা যায়, প্রতিশ্রুতির অনেক কিছুই পূরণ করতে পারেননি তিনি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মুদ্রাস্ফীতির হার ২ শতাংশে উন্নীত করা, সে লক্ষ্য তিনি এখনো অর্জন করতে পারেননি। এর বাইরে আর্থিক কিছু কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়া ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগও তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছে, যার কয়েকটি এখনো প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়ে।

জাপানের সংবিধানের সংস্কার করার প্রত্যয় থাকলেও তা এখনো পূরণ করতে পারেননি আবে। দীর্ঘদিন ধরে এই বাসনা আবে লালন করে গেলেও প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খুব বেশি দূর অগ্রসর হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। অনেকেরই মনে প্রশ্ন, সংবিধান সংস্কারে কতটা সফল তিনি হতে পারবেন। কেননা জাপানের জনমত ও উদার গণতন্ত্রী দলের একটি অংশ সংবিধানের যুদ্ধ পরিহারসংক্রান্ত ধারার রদবদল দেখতে অনিচ্ছুক।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে যাচ্ছে আবের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানের জন্য। গতকাল বুধবার দীর্ঘকাল সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনের মধ্যে দিয়ে জাপানের ইতিহাসে নতুন এক মাইলফলক গড়েন আবে। গতকাল সরকারপ্রধান হিসেবে ২ হাজার ৮৮৭ দিন পার করেন তিনি। এর মধ্যে দিয়ে তিনি ছাড়িয়ে গেলেন এত দিন ধরে এক নম্বর আসনটি ধরে রাখা সাবেক প্রধানমন্ত্রী তারো কাৎসুরার রেকর্ডকে।

বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে তিন দফায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা কাৎসুরার রেকর্ডকে এত দিন প্রায় অনতিক্রম্য বলে মনে করা হতো। কেননা, যে সময়ে জাপানের রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন, সেই সময়টা ছিল সম্রাটের একচ্ছত্র আধিপত্যের যুগ। সম্রাটের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ বা স্থায়িত্ব নির্ভরশীল ছিল। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সময়ের গণতান্ত্রিক কাঠামোতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর পদটি এখন আর একক কোনো ব্যক্তিত্বের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় নিয়ন্ত্রিত নয়, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে পদ ধরে রাখাও আগের মতো সহজ নয়। তবে তা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভেতরে থেকেই অতীতের সেই রেকর্ড ভাঙলেন শিনজো আবে।

আবের ক্ষমতাসীন থাকার দীর্ঘ রেকর্ড অবশ্য টানা সময়ের জন্য নয়, বরং দুই মেয়াদে তিনি সেটা অর্জন করতে পেরেছেন। এর আগে ২০০৬ সালে প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর এক বছরের মাথায় স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হওয়ার পর থেকে টানা প্রায় ৭ বছর ধরে সেই পদে তিনি বহাল আছেন।

আবের এই সাফল্যের কারণ হিসেবে জাপানের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশের অর্থনীতিতে নানা রকম ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও মোটামুটি সংকটমুক্ত রেখেছেন আবে। এটিকে তাঁর প্রশাসনের সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রধান ক্ষমতাসীন উদার গণতন্ত্রী দলে প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো তেমন বলিষ্ঠ কোনো নেতৃত্বের আবির্ভাব না হওয়ায় আবে এত দিন টিকে আছেন বলে মনে করছেন তাঁরা। একাধিক কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও টিকে আছে আবে প্রশাসন। এই পথ চলা অন্তত আরও দুই বছর থাকছেই।

জাপানে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের বেলায় সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা টেনে দেওয়া নেই। সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক কাঠামোতে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী দলের নেতা সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন। উদার গণতন্ত্রী দলে দলীয় সভাপতির পদে অবশ্য তিন মেয়াদের একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা আছে। সেই অনুযায়ী আবের চলমান সর্বশেষ তৃতীয় মেয়াদ ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা। তাই ধারণা করা হচ্ছে, জাপানের রাজনীতিতে বড় কোনো বিপর্যয় না ঘটলে সেই সময় পর্যন্ত দায়িত্ব তিনি হয়তো পালন করে যাবেন।