জি-২০ সম্মেলনে শেষ মুহূর্তে নাগোইয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার মন্ত্রী

জাপানের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কে বেশ কিছুদিন ধরে টানাপোড়েন চলছে। এর মূলে রয়েছে জাপানের যুদ্ধকালীন কিছু পদক্ষেপ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিরাজমান অসন্তোষ।

১৯১০ সাল থেকে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের আগ পর্যন্ত কোরীয় উপদ্বীপ ছিল জাপানের দখলে থাকা উপনিবেশ। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার ও জনগণের বড় এক অংশ অনেক দিন ধরে দাবি করছে, এ সময়ে জাপানি প্রশাসনের অন্যায় কিছু আচরণে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ কোরীয়রা পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ বা জাপানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা কোনোটিই পায়নি।

জাপানের অন্যায় আচরণের দুটি দৃষ্টান্ত হিসেবে যে বিষয়গুলো দক্ষিণ কোরিয়া তুলে ধরছে, তা হলো অল্প বয়সী বালিকাদের বাধ্যতামূলকভাবে যৌন সেবা প্রদানে নিয়োগ করা এবং জাপানি কোম্পানিতে দক্ষিণ কোরীয়দের শ্রম প্রদানে বাধ্য করা।

এ বছরের শুরুর দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি হওয়া জাপানের উচ্চ প্রযুক্তির পণ্যের ওপর দেশটির সরকার নিয়ন্ত্রণ কঠোর করে। এতে সংকট আরও গভীর হয়ে ওঠে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি করে নেওয়ার চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। চুক্তির মেয়াদ ২৩ নভেম্বর পেরিয়ে গেছে। চুক্তি থেকে সরে না যাওয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নাগোইয়ায় জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাং গিউন হোয়ার যোগ দেওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল।

২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ব্লু হাউসের প্রচারিত এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, শর্ত সাপেক্ষে দক্ষিণ কোরিয়া চুক্তিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার স্ব-আরোপিত শর্তটি হচ্ছে সুনির্দিষ্ট সময়সীমায় নয়, বরং এখন থেকে যেকোনো সময়ে চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার অধিকার দক্ষিণ কোরিয়ার থাকবে। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই দক্ষিণ কোরিয়ার চুক্তিতে থেকে যাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে।

ব্লু হাউসের ঘোষণার পরপর নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জি-২০ বৈঠকে যোগ দিতে গতকাল রাতে নাগোইয়া এসে পৌঁছেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাং গিউন হোয়া স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে উপস্থিত ছিলেন না। তবে স্থানীয় সময় আজ শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পাশাপাশি অন্যান্য বৈঠকে কাং গিউন হোয়া যোগ দিচ্ছেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিৎসু মোতেগির সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠক করার কথা। সংবাদমাধ্যম নজর দিচ্ছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা নিয়ে কোন ধরনের আলোচনা তাঁরা করবেন।

সকালের প্রথম অধিবেশনে জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মুক্তবাজার ও বাণিজ্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা শেষে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করেন। পরবর্তী সময়ে আফ্রিকার উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনার শেষে সভাপতির একটি বিবৃতি প্রচার করা হবে।

নাগোইয়া শহরের মেয়র তাকাশি কাওয়ামুরা সম্মেলনের মিডিয়া সেন্টার পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি চাইছেন সম্মেলন উপলক্ষে সমবেত বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যেন অনুধাবন করতে পারেন নাগোইয়া আশা এবং নতুন করে যাত্রা শুরু করার শহর। তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরটি নতুন করেই কেবল যাত্রা শুরু করেনি। একই সঙ্গে জাপানের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার প্রধান একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়ে আশার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তাকাশি কাওয়ামুরা বলেন, বছর তিনেক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ তাঁর হয়েছিল। বাংলাদেশও যে নাগোইয়ার অনুসৃত পথ ধরে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে, সে আশা তাঁর আছে।