'নাগরিকত্ব আইন না মানলে উত্তর কোরিয়া যান'

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও রেল অবরোধ, বিভিন্ন রেল ও বাসস্টেশনে হামলা, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ট্রেন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও রেল অবরোধ, বিভিন্ন রেল ও বাসস্টেশনে হামলা, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ট্রেন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও রেল অবরোধ, বিভিন্ন রেল ও বাসস্টেশনে হামলা, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ট্রেন। যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। রাজ্যজুড়ে অরাজকতা দেখা দিয়েছে।

এ ঘটনার জেরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার তৃণমূলের মেয়র ফরহাদ হাকিম আর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহাসহ অন্যরা।

মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় নাগরিকত্ব আইন না মানলে বিক্ষোভকারীদের উত্তর কোরিয়ায় চলে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন।

সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল পাস হওয়ার পর ভারতের উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। উত্তর-পূর্ব রাজ্যের মেঘালয়ের রাজ্যপাল বা গভর্নর হলেন পশ্চিমবঙ্গের একসময়ের বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়। তিনি সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল পাস হওয়ার পর মেঘালয়ে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের বলেছেন, ‘নাগরিকত্ব আইন না মানলে চলে যান উত্তর কোরিয়ায়।’

তথাগত রায় বলেছেন, এই আইনের বিরুদ্ধে যাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, বিজেপি সরকার বিভেদের রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ তুলছেন, তাঁদের সবার উত্তর কোরিয়া চলে যাওয়া উচিত। স্বৈরশাসক হিসেবে গোটা বিশ্বে পরিচিত উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং–উন। বুধবার তিনি টুইট করেন, ‘এই মুহূর্তে দেশের যা পরিস্থিতি তাতে দুটো বিষয় ভুললে চলবে না। প্রথমত ধর্মের নামে দেশ ভাগ করা হয়েছিল। আর দ্বিতীয়ত, গণতন্ত্র মানেই তো বিভাজনকারী।’ তা না চাইলে উত্তর কোরিয়া চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

রাজ্যপাল তথাগত রায়ের এই মন্তব্যের পর শুক্রবার মেঘালয়ের রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান একদল বিক্ষোভকারী। তাঁরা দাবি তোলেন, এই রাজ্যে কেউ ঢুকতে গেলে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করতে হবে। বিক্ষোভকারীরা জোর করে রাজভবনে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করে। এতে দুই পক্ষের কয়েকজন আহত হন।

এই ঘটনার জেরে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি এবং বর্তমান বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা গতকাল শনিবার বলেছেন, ‘নতুন বছরের শুরুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিদায় নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে ফেলতে চাই না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি আরও কিছুদিন চললে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা ছাড়া পথ থাকবে না। ২০২০ সালের শুরুতেই বিদায় নিতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।’

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও রেল অবরোধ, বিভিন্ন রেল ও বাসস্টেশনে হামলা, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ট্রেন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও রেল অবরোধ, বিভিন্ন রেল ও বাসস্টেশনে হামলা, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ট্রেন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কলকাতা পৌরসভার মেয়র এবং রাজ্যের পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম গতকাল বলেছেন, ‘এটা হিন্দু-মুসলিমের লড়াই নয়। একটা সম্প্রদায়কে অরাজকতা করতে ইন্ধন জোগানো হচ্ছে। বিজেপির হাত শক্ত করা হচ্ছে। বাংলায় এনআরসি আর ক্যাব করতে দেবেন না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাহলে বাংলার মানুষের অসুবিধা কেন করবেন?’ ফিরহাদ হাকিম স্মরণ করিয়ে দেন, ‘এসব কাজকর্মের ফলে ৭০ শতাংশ মানুষ অমিত শাহের পক্ষে চলে যাবেন। রাজ্যে বিজেপি এসে গেলে মাথা নিচু করে থাকতে হবে। তখন আর রাস্তায় কেউ নামবে না। তাই ক্যাব ও এনআরসি–বিরোধী মমতার আন্দোলনে শামিল হোন। কারণ বাংলার ক্ষতি হচ্ছে। আর দিল্লিতে হাসছেন অমিত শাহ।’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল শনিবার সকালের পর সন্ধ্যায় ফের এক আবেদনে বলেছেন, ‘আমি আবার রাজ্যবাসীকে অনুরোধ করছি, কোনোভাবে কোনো হিংসাত্মক কাজে লিপ্ত হবেন না। রাজ্যজুড়ে সম্প্রীতি বজায় রাখুন। মনে রাখবেন থানা, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর, পোস্ট অফিস, সরকারি দপ্তর, পরিবহন ব্যবস্থা সবই জনগণের সম্পত্তি। সরকারি এবং বেসরকারি যেকোনো ধরনের সম্পত্তির কোনো ক্ষতি হলে তা রাজ্য সরকার কোনোভাবে বরদাশত করবে না এবং এ জন্য আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেবে। রাজ্য সরকার একদিকে যেমন ক্যাব এবং এনআরসির বিরুদ্ধে, ঠিক তেমনি সব রকম দাঙ্গাহাঙ্গামা এবং শান্তি নষ্ট করার যাবতীয় প্রচেষ্টার ঘোরবিরোধী। আমরা নাগরিক সংশোধনী বিল এবং এনআরসির বিরুদ্ধে যাবতীয় বিরোধিতা করতে চাই কেবল গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে। কিছু রাজনৈতিক দল অশান্তির আবহ ও দাঙ্গা তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকুন। সবাই শান্তি এবং সম্প্রীতি বজায় রাখুন। আইন হাতে তুলে নেবেন না।’

জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লার গৃহবন্দিত্বের মেয়াদ আরও ৩ মাস বাড়ানোয় মমতা টুইট করেন। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের গণতান্ত্রিক দেশে এ ঘটনা ঘটছে। এটা অসাংবিধানিক।’

বিজেপি আরও বলেছে, ‘আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োজনে প্রয়োগ করুন। তবে শান্তি বজায় রেখে।’