পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শিক্ষকের মৃত্যুদণ্ড

মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষক জুনায়েদ হাফিজ। ছবি: সংগৃহীত
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষক জুনায়েদ হাফিজ। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার (ব্লাসফেমি) মামলায় দেশটির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রভাষককে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার মুলতানের একটি আদালত এই দণ্ডাদেশ দেন। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদন এই তথ্য জানানো হয়।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকের নাম জুনায়েদ হাফিজ (৩৩)। তাঁকে ২০১৩ সালের মার্চে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য পোস্ট করেছেন।

জুনায়েদ হাফিজের প্রথম আইনজীবী ছিলেন রশিদ রেহমান। হাফিজের পক্ষে মামলা লড়তে রাজি হওয়ার পর ২০১৪ সালে রশিদকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর কারাগারে একাধিকবার অন্য বন্দীদের হামলার শিকার হন হাফিজ। পরে তাঁকে একটি সেলে একাকী অবস্থায় বন্দী রাখা হয়।

মুলতানের কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন হাফিজ। সেই কারাগারেই রায় ঘোষণা করেন আদালত।

দ্য ডন অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলায় হাফিজের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনা হয়। তিনটি অভিযোগেই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেন আদালত।

একটি অভিযোগে হাফিজকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আরেকটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। অপর একটি অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া তাঁকে ছয় লাখ রুপি জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায় ঘোষণার পর হাফিজের বর্তমান আইনজীবী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এই রায় খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা আপিল করবেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা সহকর্মীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেছেন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই রায়ে ‘চরম হতাশা’ ও ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করেছে। এই রায়কে ‘ন্যায়বিচারের চরম ব্যর্থতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে সংগঠনটি।

হাফিজ সম্মানজনক ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মাস্টার্স করেন। আমেরিকান সাহিত্য, আলোকচিত্র ও থিয়েটার বিষয়ে তাঁর বিশেষত্ব রয়েছে।

পাকিস্তানে ফিরে হাফিজ মুলতানের বাহাউদ্দিন জাকারিয়া ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় সেখানেই কর্মরত ছিলেন তিনি।

পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন প্রায় ৪০ ব্যক্তি। তবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই আইনে কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।

পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনে খ্রিষ্টান নারী আয়শা বিবিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হলে তা বিশ্বব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলে। মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে আট বছর কারাগারে ছিলেন আয়শা বিবি। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট খালাস দিলে আয়শা বিবি গত বছর কারাগার থেকে মুক্তি পান। তাঁর মুক্তিকে কেন্দ্র করে দেশটিতে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এমন প্রেক্ষাপটে তিনি অন্য দেশে আশ্রয় নেন।