দাঙ্গা করের প্রয়োগ, আদিত্যনাথের 'বদলা'

যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: আইএএনএস
যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: আইএএনএস

দাঙ্গার ‘বদলা’ বা প্রতিশোধ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি পূরণ করতে চলেছেন। নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তৈরির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন শহরে সরকারি সম্পত্তির নষ্টে যারা অভিযুক্ত, তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রক্রিয়া তিনি শুরু করে দিলেন। উত্তর প্রদেশের রামপুর জেলার ২৮ জনকে রাজ্য প্রশাসন নোটিশ পাঠিয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার ক্ষতিপূরণ বাবদ মোট ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা আদায় করা হবে।

উত্তর প্রদেশের যে জেলাগুলোয় এই সহিংসতা দেখা দেয়, রামপুর তার অন্যতম। সেখানে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হন। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটের ঘায়েও পুলিশ কর্মীসহ অনেকে আহত হন।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই জেলায় দাঙ্গার অভিযোগে মোট ১৫০ জনকে চিহ্নিত করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের নোটিশ পাঠানো হয়েছে ২৮ জনকে। মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ জানিয়েছিলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। রাজ্যের সর্বত্রই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের এ ধরনের নোটিশ পাঠানো হবে।

ভারতের রাজনীতি এই মুহূর্তে নাগরিকত্ব বিতর্ককে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শাসকগোষ্ঠী এনডিএতেও ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক অকালি দল আগেই সিএএতে প্রতিবেশী তিন দেশের অত্যাচারিত মুসলমানদেরও ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। এবার সেই দলের নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দর কুমার গুজরালের ছেলে নরেশ গুজরাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিজেপি কোনো শরিকের সঙ্গেই আলোচনা করেনি। এক সাক্ষাৎকারে এই অভিযোগ জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য প্রত্যেক শরিক ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট। নরেশ গুজরাল এই সাক্ষাৎকারে বলেন, জোট চালাতে জানতেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি। ২০ দলের জোটের প্রত্যেককে তিনি সম্মান করতেন। সবার সঙ্গে কথা বলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন। নরেশ বলেন বলেন, জোটধর্ম ঠিক কেমন, বাজপেয়ির কাছ থেকে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর তা শেখা উচিত।

দেশজোড়া বিক্ষোভ প্রশমনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এনআরসি নিয়ে কিছুটা পিছু হটেছেন। কিন্তু অসন্তোষের আগুন তাতে নেভেনি; বরং আচমকাই ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার বা এনপিআর হালনাগাদ করতে অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এনআরসিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে এনপিআর একটা প্রধান ধাপ বলে কেন্দ্রীয় সরকার আগেই জানিয়েছিল। সেই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত দেশকে নতুনভাবে সচকিত করেছে।

এনপিআর প্রথম চালু হয় ২০১০ সালে। পাঁচ বছর পর ২০১৫ সালে তা আপডেট বা হালনাগাদ করা হয়। কিন্তু সে সময় নাগরিকদের কাছ থেকে যেসব নথি বা তথ্য চাওয়া হয়েছিল, এবার তার সঙ্গে বাড়তি কিছু নথি বা তথ্য যোগ করা হয়েছে। নতুন সমীক্ষায় নাগরিকদের মা-বাবার জন্ম কোথায় ও কোন সালে, তা জানাতে হবে। ২০১০ সালের সমীক্ষায় মোট ১৫টি বিষয়ের উত্তর দিতে হতো। ২০২০ সালের এনপিআরে দিতে হবে ২১টি বিষয়ের জবাব।

এনআরসি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এত দিন ধরে সংসদের ভেতর ও বাইরে যা বলে এসেছেন, গত রোববার দিল্লির রামলীলা ময়দানের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তা নস্যাৎ করার পর শাহর কণ্ঠেও এখন ভিন্ন সুর। তিনি এখন বলছেন, প্রধানমন্ত্রীই ঠিক। এনআরসি নিয়ে কোনো উদ্যোগই নেই। এমনকি তিনি এ কথাও বলেন, দেশের কোথাও ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে না। এই বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তব যে বেমানান, তার বহু উদাহরণ দেশের মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে। তাই এনপিআর নিয়ে অমিত শাহর দাবিও সাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। তিনি যতই বলুন, এনপিআরের সঙ্গে এনআরসির যোগ নেই, বিরোধীরা তা মানতে নারাজ। এমনকি এ নিয়ে এনডিএর শরিকদের মধ্যেও নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।