রোহিঙ্গা নির্যাতন: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস

কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা বসতি। প্রথম আলো ফাইল ছবি
কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা বসতি। প্রথম আলো ফাইল ছবি

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় গতকাল শুক্রবার নিন্দা প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গা ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বিদ্বেষমূলক উত্তেজনা সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয় ১৩৪ দেশ। বিপক্ষে ভোট দেয় ৯টি দেশ। আর ২৮টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

২০১৭ সালে বৌদ্ধ আধিপত্যের দেশ মিয়ানমারে সামরিক অভিযানে রাখাইন রাজ্যে হাজার হাজার রোহিঙ্গা হত্যার ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।

রোহিঙ্গা হত্যার কথা বরাবর অস্বীকার করে মিয়ানমার দাবি করেছে, চরমপন্থীদের হামলার হুমকি থাকায় তারা অভিযান চালায়।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ১১ ডিসেম্বর মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

আজ শনিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল পাস করা প্রস্তাবে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর নৃশংসতার কারণে চার দশক ধরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

প্রস্তাবে রোহিঙ্গা হত্যা ও নির্যাতনের ব্যাপারে স্বাধীন আন্তর্জাতিক মিশনের প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণ ও তথ্য তুলে ধরা হয়। মিশনের প্রতিবেদনে এটাকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ উল্লেখ করে বলা হয়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ।

প্রস্তাবে সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে প্রতিটি গোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

জাতিসংঘে পাস হওয়া প্রস্তাব পালনের ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলেও বৈশ্বিক মতামতের ক্ষেত্রে এর বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে।

এদিকে প্রস্তাব পাসের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হাউ দো সুয়ান বলেছেন, এই প্রস্তাব পাস মানবাধিকারের বৈশিষ্ট্যের দ্বিমুখী, বাছাইমূলক এবং বৈষম্যমূলক আচরণ প্রয়োগের আরেকটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। মিয়ানমারের ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের পরিকল্পনা থেকে এটা (প্রস্তাব পাস) করা হয়েছে। এতে রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত জটিল পরিস্থিতি সমাধানে কোনো উপায় খোঁজা হয়নি।

মিয়ানমারের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে জাতিসংঘকে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে দেশটির বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। চলতি বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ওই আদালতে মামলাটি করা হয়। মামলায় মিয়ানমারের পক্ষে লড়ছেন স্বৈরশাসনের অধীনে দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থাকা অং সান সু চি।

১০ ডিসেম্বর অং সান সু চির উপস্থিতিতে রোহিঙ্গা গণহত্যার (মানবতাবিরোধী নৃশংসতার) সারাংশ তুলে ধরেন আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু। তিনি বলেন, বিশ্ব বিবেকের কালিমা মোচনে আর দেরি করা চলে না। গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আরও বলেন, একমাত্র এই আদালতই শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে, আশা জাগাতে পারে। আইসিজে মিয়ানমারকে বলুক যে এখনই রোহিঙ্গা শিশুদের হত্যা বন্ধ করতে হবে, নৃশংসতার অবসান ঘটাতে হবে।

পরদিন রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বক্তব্য দেন অং সান সু চি। তিনি বলেন, তাঁর দেশের সেনাসদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে তা মিয়ানমারের দেশীয় তদন্ত ও বিচারব্যবস্থায় নিষ্পত্তি করা হবে। এটিকে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই। আদালতে গাম্বিয়ার দেওয়া বিভিন্ন তথ্যকে বিভ্রান্তিকর এবং রাখাইনে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে সংঘাতের ফল হিসেবে অভিহিত করেন অং সান সু চি।