দিল্লিতে বাসে আগুনটা পুলিশই দিয়েছিল, তদন্তে প্রমাণিত

ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ চলাকালে দিল্লিতে বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশই আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল বলে তাদের অভ্যন্তরীণ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। ফাইল ছবি
ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ চলাকালে দিল্লিতে বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশই আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল বলে তাদের অভ্যন্তরীণ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। ফাইল ছবি

ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে বিক্ষোভের সময় গত ১৫ ডিসেম্বর দিল্লিতে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছিল, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে কিছু বাসে পুলিশ নিজেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যদিও পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল, কিন্তু নিজেদের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে ঘটনাটা সত্য।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের আজ রোববারের খবরে বলা হয়েছে, ১৫ ডিসেম্বর নিউ ফ্রেন্ডস কলোনিতে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে বাসে আগুন লাগার ঘটনা তদন্ত করে পুলিশ। সেই তদন্তে বলা হয়েছে, এসিপি পদধারী একজন পুলিশ কর্মকর্তার সামনে দুই পুলিশ সদস্য তিনটি গুলি ছুড়ে। যদিও অভিযোগের পর দিল্লি পুলিশ দাবি করেছিল, সংঘর্ষের সময় তারা একটি গুলিও ছোড়েনি।

ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পার্লামেন্টের দিকে যাচ্ছিল। পুলিশ তাদের মথুরা রোডে আটকে দেয়। পুলিশের কাছ থেকে বাধা পেয়ে একদল বিক্ষোভকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাটা তখনই ঘটে। এ ছাড়া এর কয়েক ঘণ্টা পর জামিয়া মিলিয়ার দুই শিক্ষার্থী আজিজ আহমেদ (২০) ও মোহাম্মদ সোয়েবকে (২৩) সফদারজং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মোহাম্মদ তাইমিন (২৩) নামের একজনকে ভর্তি করা হয় হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। তিনজনই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে যান। আর তাঁরা যে সত্য বলেছেন, সেটা হাসপাতালের নথি থেকেও প্রমাণিত।

তবে ঘটনার বিষয়ে ডিসিপি (দক্ষিণপূর্ব) চিন্ময় বিসওয়ালের ভাষ্য ছিল, ‘হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। আহতের ভাষ্যের ভিত্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ কথা লিখেছে। কারণ, কোনো শিক্ষার্থীর ওপর আমরা গুলি ছুড়িনি। অন্য কোনো মেটাল বা প্লাস্টিকের আঘাতে তিনি আহত হয়ে থাকতে পারেন। সফদারজংয়ে দুজন গুলিবিদ্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে। তবে কেউ যদি আমাদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয় তাঁকে হলি ফ্যামিলি বা ফর্টিসে নিয়ে যাওয়ার কথা। কারণ ঘটনাস্থল থেকে এগুলোই সবচেয়ে কাছের হাসপাতাল।’

গুলির বিষয়ে বারবার জানতে চাওয়া হলেও সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা গুলি ছোড়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে যে সেখানে গুলির ঘটনা ঘটেছিল। আর সেটা হয়েছিল এসিপি পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে। একটি সূত্র বলছে, যখন তথ্য-প্রমাণসহ ওই কর্মকর্তার কাছে এর ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয় তখন তিনি বলেছেন, আত্মরক্ষার্থে তাঁরা এমনটা করেছিলেন।

পুরো ঘটনার বিশ্লেষণ থেকে প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়, ১৫ ডিসেম্বর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে গুলি চালায় এবং বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে গতকাল শনিবার জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ডিসিপি (দক্ষিণপূর্ব) চিন্ময় বিসওয়াল।

সফদারজং হাসপাতালের কর্মকর্তা সুনীল গুপ্ত বলেন, ‘চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন দুই শিক্ষার্থী। তাদের দেহ থেকে যে বস্তু বের করা হয়েছে, তা দিল্লি পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমাদের কাজ শুধু রোগীকে সেবা দেওয়া।’ আর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের পরিচালক ফাদার জর্জ বলেছেন, ‘আমরা আহত ব্যক্তির শরীর থেকে যা পেয়েছি তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য দিল্লি পুলিশকে দিয়েছি। এটা গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল নাকি অন্য কিছু, সেটা তারা খুঁজে বের করবে।’