শক্তিশালী হয়েছে ইরানি শাসকদের হাত

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি ধুঁকছে। বেড়েছে দ্রব্যমূল্য। বেকারত্বের ঊর্ধ্বগতি তো আছেই। এর মধ্যে গত নভেম্বরে পেট্রলের দাম বাড়ানোয় ছড়িয়ে পড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। অসন্তোষ ডানা বাঁধে শহরের পর শহর। ব্যাপক বিক্ষোভের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়া সরকার অনেক স্থানে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। বিশ্লেষকেরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের প্রভাবশালী জেনারেল কাশেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার ঘটনা ইরানিদের মনে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিদ্বেষ চাঙা হবে। এতে করে দেশটির শাসকদের জনপ্রিয়তা বাড়বে। আর বিপদ বাড়বে সরকারবিরোধীদের।

ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেন ইরানের অভিযানের প্রধান কারিগর বলা হতো সোলাইমানিকে। আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ভাবা হতো তাঁকে। তাঁর জানাজায় ইরানের শহরগুলোতে জনতার ঢল নামে। ইরাকেও একই চিত্র ছিল। ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির পর আর কোনো নেতার জানাজায় এত মানুষের অংশগ্রহণ দেখা যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান র‍্যান্ড করপোরেশনের সহকারী রাজনৈতিক বিজ্ঞানী অ্যারিয়ান তাবাতাবেই বলেন, ইরানের শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক আদর্শের সব পক্ষের অনেক নেতার সঙ্গে সোলাইমানির ভালো সম্পর্ক ছিল। তাই তাঁর জানাজার অংশ হিসেবে শাসকদের পতাকাতলে মানুষ মিলিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নভেম্বরে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভ এখনো চলছে। এখন সোলাইমানি হত্যার ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দেশটির ভিন্নমতাবলম্বীদের গুঁড়িয়ে দিতে পারেন ইরানের শাসকেরা।

যদিও পশ্চিমা মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলেছে, ইরানে বিক্ষোভ দমাতে ইতিমধ্যে ব্যাপক বলপ্রয়োগ করেছে শাসকগোষ্ঠী। শত শত মানুষ নিহত হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে। তবে ইরান সরকার নিহত হওয়ার প্রকৃত সংখ্যা জানায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনসের মিডল ইস্ট স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক রয় তাইকেহ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি ধসে পড়েছে। দেশটি এখন বাজেট দিতেই হিমশিম খাচ্ছে। দেশটির চার দশকের ইতিহাসে শাসকেরা দুটি বিষয় সামনে এনে জনসমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করে। একটি হচ্ছে বিপ্লবের উদ্দীপনা, অন্যটি যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে জনপ্রিয় জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র–বিরোধিতা উসকে দিয়েছে। তাঁর জানাজায় মানুষের ঢল নামা দেখে সেটা বোঝা গেছে।

তেহরানে ফ্রান্সের সাবেক রাষ্ট্রদূত ফ্রাঁসোয়া নিকাল্লাউড বলেন, তাঁরা (ইরানের শাসকেরা) বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করার সুযোগ পেয়েছেন। এই সুযোগ খুব বেশি দিন না থাকলেও সেটা কিছুদিন থাকবে, তা নিশ্চিত।

ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি মধ্যপন্থী। সোলাইমানি হত্যার ঘটনায় দেশটির কট্টরপন্থীদের প্রভাব বাড়বে। মাত্র ছয় সপ্তাহ পর অনুষ্ঠেয় পার্লামেন্ট নির্বাচনেও রুহানিকে চাপে ফেলতে পারেন কট্টরপন্থীরা।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানবিষয়ক বিশ্লেষক আলী ভায়েজ বলেন, এখন নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ইরানের পার্লামেন্ট দেশটির কট্টরপন্থী ও মিলিশিয়াদের হাতে গিয়ে পড়বে। আর তখনই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব আরও চাঙা হবে ইরানের শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে।

সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তেহরান। কীভাবে সেই প্রতিশোধ নেওয়া যায়, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ দেশটির জন্য। তবে এই প্রতিশোধমূলক হামলার পর ইরান ও ইরানের বাইরে তার প্রভাব কী হবে, সেটা দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে সতর্কতার সঙ্গে ভেবে দেখতে হবে।