ইরান আসলে কত শক্তিশালী?

বিশ্বে সামরিক অস্ত্রের সক্ষমতার দিক থেকে ইরান আছে ১৪ নম্বরে। দেশটির পেছনে আছে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরায়েল (১৮) ও সৌদি আরব (২৫)। সূচকের শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি
বিশ্বে সামরিক অস্ত্রের সক্ষমতার দিক থেকে ইরান আছে ১৪ নম্বরে। দেশটির পেছনে আছে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরায়েল (১৮) ও সৌদি আরব (২৫)। সূচকের শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার দ্বৈরথ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলায় কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এ ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছিল ইরান। এরই মধ্যে ইরাকে মার্কিন বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা। কিন্তু আদৌ কি এমন যুদ্ধ চালানোর মতো সক্ষমতা ইরানের আছে?

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্সের ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক অস্ত্রের সক্ষমতার দিক থেকে ইরান আছে ১৪ নম্বরে। দেশটির পেছনে আছে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরায়েল (১৮) ও সৌদি আরব (২৫)। সূচকের শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে রাশিয়া ও চীন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে অস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তি কেনার পথ খানিকটা বন্ধুর হয়ে যায় ইরানের। আর ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় পড়ার পর থেকে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় থেকেই ইরান নিজেরাই নানা ধরনের অস্ত্র, অস্ত্রের উপকরণ তৈরি ও এ–সংক্রান্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ইরান বেশ সফলও হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি, ড্রোন তৈরি ও পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথে বেশ এগিয়ে গেছে ইরান। তবে শত্রুপক্ষের প্রভূত ক্ষতিসাধনে ইরান সমর্থ হলেও প্রবল পরাক্রমশালীর বিরুদ্ধে প্রচলিত যুদ্ধ জয়ের জন্য তা যথেষ্ট নয়।

আসুন, দেখে নেওয়া যাক সামরিক ক্ষমতায় কতটা শক্তিশালী ইরান—

ইরানে খোমেনি স্পেস সেন্টারে চলছে রকেট পরীক্ষা। ফাইল ছবি। ছবি: রয়টার্স
ইরানে খোমেনি স্পেস সেন্টারে চলছে রকেট পরীক্ষা। ফাইল ছবি। ছবি: রয়টার্স

ক্ষেপণাস্ত্র
ইরানের শক্তির মূল স্তম্ভ হলো নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র। মূলত বিমান হামলা চালানোর সক্ষমতা ইরানের তুলনামূলক কম। তাই পরিকল্পিতভাবেই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা শক্তিশালী করায় মনোযোগ দিয়েছে ইরান। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র–ভান্ডার আছে ইরানের। তবে ইসরায়েল, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো সেগুলো এত নিখুঁত নয়। অর্থাৎ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো লক্ষ্যবস্তুতে ততটা নিখুঁতভাবে হামলা চালাতে সক্ষম নয়। তবে হ্যাঁ, বিক্ষিপ্তভাবে ধ্বংসযজ্ঞ ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এগুলোর।

মার্কিন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইরানের অস্ত্রভান্ডারে মূলত স্বল্প ও মধ্যমপাল্লার নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এক ডজনের বেশি ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আছে ইরানের। এর মধ্যে কিয়াম-১ নামের ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ৭০০ কিলোমিটারের বেশি। ৭৫০ কেজি ওজনের বিস্ফোরক এটি বহন করতে পারে। ২০১৭ সালে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল ইরান। অন্যদিকে শাহাব-৩ প্রকৃতিগতভাবে ব্যালিস্টিক মিসাইল, যার পাল্লা দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) বলছে, ইরানের ৫০টির বেশি মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল লঞ্চার ও ১০০টির বেশি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল লঞ্চার রয়েছে। সম্প্রতি আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা করায়ত্ত করার চেষ্টা করছে ইরান। এর জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চলছে।

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির প্রাক্কালে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থার উন্নয়নের কাজটি বন্ধ করেছিল ইরান। তবে গবেষণা সংস্থা রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট বলছে, বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইরান সেই কর্মসূচি ফের শুরু করেছে বলেই তাদের বিশ্বাস।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষেপণাস্ত্রের মতো প্রযুক্তিগত দিক থেকে ততটা নিখুঁত নয় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। তবে আঘাত হেনে ক্ষতিবৃদ্ধির জন্য সেগুলো যথেষ্ট। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সৌদি আরবসহ পারস্য অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় আছে। এই তালিকায় আছে ইসরায়েলও। অবশ্য ইসরায়েলের হাতে আছে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। আবার গত বছরের মে মাসে মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের রক্ষা করতে প্যাট্রিয়ট নামের সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা স্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত ইরানের ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল ঠেকাতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন জেনারেল জেমস মার্কস বলছেন, ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন সেনাদের জীবনের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রায় ৬০ হাজার মার্কিন সেনা। জেমস মার্কসের মতে, ইরান চাইলে এসব মার্কিন স্থাপনায় যেকোনো সময় হামলা চালাতে পারে। দেশটির নানান স্থানে মিসাইল লঞ্চার ছড়িয়ে রাখায় যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য দেশের পক্ষে এগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করাও কঠিন।

ইরানের সক্রিয় সেনাসদস্যের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ২৩ হাজার। এর মধ্যে নিয়মিত বাহিনীর সদস্য আছে সাড়ে তিন লাখ। ফাইল ছবি। ছবি: রয়টার্স
ইরানের সক্রিয় সেনাসদস্যের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ২৩ হাজার। এর মধ্যে নিয়মিত বাহিনীর সদস্য আছে সাড়ে তিন লাখ। ফাইল ছবি। ছবি: রয়টার্স

সেনাবাহিনী
আইআইএসএসের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ইরানের সক্রিয় সেনাসদস্যের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ২৩ হাজার। এর মধ্যে নিয়মিত বাহিনীর সদস্য আছে সাড়ে তিন লাখ। আর ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের সদস্য আছে দেড় লাখ।

রেভল্যুশনারি গার্ডের অধীনে আছে নৌবাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। অন্যদিকে ‘বাসিজ’ নামের একটি বিশেষায়িত ইউনিটও নিয়ন্ত্রণ করে রেভল্যুশনারি গার্ড। মূলত দেশের অভ্যন্তরে ভিন্নমত দমনের জন্য এই ইউনিটের সদস্যদের ব্যবহার করা হয়। তবে সামরিক প্রশিক্ষণ পাওয়া এই সেনারা প্রচলিত যুদ্ধেও অংশ নেওয়ার যোগ্যতা রাখে। ধারণা করা হয়, এই ইউনিটে কয়েক লাখ সদস্য রয়েছে।

ইরানের হাতে আরও আছে কুদস ফোর্স। অপ্রচলিত যুদ্ধ, ছায়াযুদ্ধ ও বিদেশের মাটিতে গোপন অভিযান চালানোর জন্য এই বাহিনী বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। আনুমানিক হিসাবে এই বাহিনীর সদস্য পাঁচ হাজার। ধারণা করা হয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ছড়িয়ে আছে কুদস ফোর্সের সদস্যরা।

ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের সদস্য আছে দেড় লাখ। রেভল্যুশনারি গার্ডের অধীনে আছে নৌবাহিনী। এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। ছবি: রয়টার্স
ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের সদস্য আছে দেড় লাখ। রেভল্যুশনারি গার্ডের অধীনে আছে নৌবাহিনী। এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। ছবি: রয়টার্স

পারমাণবিক অস্ত্র
ইরানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র নেই। ইরান নিজেও এ ব্যাপারে কোনো ঘোষণা যেমন দেয়নি, তেমনি পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কখনো এমন নিশ্চয়তা পায়নি। তবে ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ও এ–সংক্রান্ত প্রযুক্তিজ্ঞান রয়েছে।

২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, ইরানের কাছে যেসব উপকরণ ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি আছে, সেগুলোর সহায়তায় দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা তাদের পক্ষে সম্ভব। পরে ওই বছরই ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। তা থেকে ট্রাম্পের দেশ বের হয়ে যাওয়ায় এবং বর্তমান সংক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে পারমাণবিক চুক্তির বাধ্যবাধকতায় আর নেই খামেনির দেশ। ফলে ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি ফের শুরু করে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে এ–সংক্রান্ত উন্নত পশ্চিমা প্রযুক্তি হাতে না থাকায় ইরানের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা সময়সাপেক্ষ হবে বলেই মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।

সৌদি আরবের দাবি, এসব ধ্বংসাবশেষ ইরানের তৈরি ড্রোনের। ফাইল ছবি। ছবি: রয়টার্স
সৌদি আরবের দাবি, এসব ধ্বংসাবশেষ ইরানের তৈরি ড্রোনের। ফাইল ছবি। ছবি: রয়টার্স

ড্রোন
বেশ কয়েক বছর ধরেই যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহার করছে ইরান। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এসব ড্রোন ২০১৬ সালে ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে ইরান। নিজেরা ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক মিত্রদের কাছেও এই প্রযুক্তি সরবরাহ করছে ইরান।

মনুষ্যবিহীন ড্রোন প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের অভিযোগ—গত বছর সৌদি তেলকূপে যে হামলা হয়েছিল, সেটি ইরানের চালানো হামলা এবং এতে ব্যবহার করা হয়েছিল ড্রোন। যদিও ইরান এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। তবে গত জুনে ইরান মার্কিন গুপ্তচর ড্রোন ভূপাতিত করার পর থেকে এটি স্পষ্ট যে ড্রোন প্রযুক্তি বেশ ভালোভাবেই করায়ত্ত করেছে কাশেম সোলাইমানির দেশ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোনগুলোর মতো ততটা উন্নত নয় ইরানের ড্রোন। এগুলো থেকে ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেট ছোড়াও সম্ভব হয় না। কিন্তু এর বিকল্প হিসেবে ‘সুইসাইড ড্রোন’ তৈরি করছে ইরান। এসব ড্রোনের নাম ‘রাদ ৮৫’। এসব ড্রোনে বিস্ফোরক যুক্ত করে সেগুলো দিয়ে চালানো যায় আত্মঘাতী হামলা। সবচেয়ে বড় কথা, এসব ড্রোন নিজেরাই বানাচ্ছে ইরান।

ইরান বানিয়েছে ছোট আকারের এমন হাজার হাজার সশস্ত্র নৌকা। এসব নৌযান থেকে ছোট ছোট ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়। ছবি: সংগৃহীত
ইরান বানিয়েছে ছোট আকারের এমন হাজার হাজার সশস্ত্র নৌকা। এসব নৌযান থেকে ছোট ছোট ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়। ছবি: সংগৃহীত

নৌ সক্ষমতা
যুক্তরাষ্ট্রের ভান্ডারে যেমন বিমানবাহী বা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার মতো রণতরি আছে, সেসবের কিছুই নেই ইরানের কাছে। এর জবাব হিসেবে ইরান বানিয়েছে ছোট আকারের হাজার হাজার সশস্ত্র নৌযান। এসব নৌযান থেকে ছোট ছোট ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়। ২০১৫ সালে এক সামরিক মহড়ায় এ কৌশল দেখিয়েছিল ইরান। তাতে দেখা যায়, এসব ছোট নৌযান দিয়েও অত্যন্ত কার্যকর উপায়ে বড় আকারের যুদ্ধজাহাজকে পরাস্ত করতে পারে ইরান।

আইআইএসএসের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ইরানের কাছে এমন ছোট নৌযান আছে প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার। মূলত হরমুজ প্রণালির কথা ভেবেই এসব ছোট নৌযান তৈরি করা হয়েছে। আর পারস্য উপসাগরে ঢোকার পথ যেহেতু হরমুজ প্রণালি, তাই সেটি আটকাতে পারলেই ইরানের কেল্লা ফতে!

এর বাইরে বিপুলসংখ্যক সামুদ্রিক মাইন আছে ইরানের। ১৯৮৬ সালে এমনই এক মাইনের আঘাতে মার্কিন এক যুদ্ধজাহাজ প্রায় ডুবতে বসেছিল। তবে সমালোচকেরা বলছেন, ইরানের এসব মাইনের অধিকাংশই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি। যদিও ২০১৫ সালের সামরিক মহড়ার সময় ইরানের নৌবাহিনীর তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা রিয়াল অ্যাডমিরাল আলী ফাদাভি বলেছিলেন, তাঁর দেশ মাইন প্রযুক্তি এতটাই হালনাগাদ করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র তা কল্পনাও করতে পারবে না।

মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইরানের কাছে প্রায় পাঁচ হাজার মাইন রয়েছে। তবে এর মধ্যে অনেকগুলোই পুরোনো প্রযুক্তিতে তৈরি।

ইরানের তৈরি সমরাস্ত্রের এক প্রদর্শনী। ফাইল ছবি। ছবি: এএফপি
ইরানের তৈরি সমরাস্ত্রের এক প্রদর্শনী। ফাইল ছবি। ছবি: এএফপি

আকাশ প্রতিরক্ষা
কার্যকর বিমান হামলা চালানোর সক্ষমতা ইরানের নেই। কারণ, এর জন্য যে উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান প্রয়োজন, তা ইরানের করায়ত্ত হয়নি। তবে বেশ কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে ইরান।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ড ইউনিটের জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স সেন্টারের সাবেক পরিচালক কার্ল শুস্টার বলছেন, যুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমেই ইরানের এসব প্রতিরক্ষা স্থাপনা ধ্বংস করার চেষ্টা চালাবে। তবে সেই কাজটি সহজসাধ্য নয়। ইরান নিজেই এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে এবং এর সঙ্গে সমন্বিত রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মিশেল ঘটিয়েছে। ইরানের তৈরি এমনই একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থার নাম ‘সেভম-ই-খোরদাদ’। ধারণা করা হয়, মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করায় এটি ব্যবহার করা হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) বলছে, আকাশে সর্বোচ্চ উচ্চতায় ওড়া যুদ্ধবিমানেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম ইরান। ২০১৭ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে ইরান পেয়েছে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ‘এসএ-২০সি’। মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার মতে, আকাশ প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ইরানের হাতে থাকা সবচেয়ে ভয়ংকর অস্ত্র এটি।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন, নিউজউইক, নিউইয়র্ক টাইমস ও ভক্স ডট কম