উত্তেজনার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে গেলেন শিনজো আবে

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। রয়টার্স ফাইল ছবি।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। রয়টার্স ফাইল ছবি।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশে পাঁচ দিনের সফরে গতকাল শনিবার টোকিও ত্যাগ করেছেন। এই তিনটি দেশ হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান। মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলে এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ইরাকের রাজধানী বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর অধিনায়ক কাশেম সুলাইমানি নিহত হওয়ার পর থেকে একের পর এক ঘটতে থাকা নাটকীয় ঘটনাবলি সংঘাতময় এলাকাটিকে করে তুলেছে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এই অবস্থার ভেতরে জাপানের পূর্বঘোষিত টহলদার মিশনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ার মুখে সবকিছু ঠিকঠাক করাই জাপানের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের উদ্দেশ্য।

প্রধানমন্ত্রীর টোকিও ত্যাগ করার আগে একই দিনে জাপানের দক্ষিণের দ্বীপ ওকিনাওয়া থেকে দেশটির নৌবাহিনীর দুটি পিসি-৩ টহলদার বিমান ৬০ জন ক্রু নিয়ে পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিবুতির উদ্দেশে যাত্রা করেছে। জিবুতিতে অস্থায়ী একটি ঘাঁটি জাপান আগে থেকেই তৈরি করেছিল, যেখান থেকে আশপাশের সাগরে জলদস্যু দমন অভিযানে জাপানি বাহিনী অংশগ্রহণ করে। তবে এবারের মিশন এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ যে মুখোমুখি অবস্থানরত বৈরী কিছু দেশের নৌবাহিনীর উপস্থিতি এলাকার সমুদ্রসীমাকে করে তুলেছে অনেক বেশি অনিশ্চিত।

এবারের সফরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান যাবেন। যাত্রা শুরুর আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর মিশন নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বোধগম্যতা অর্জন করার মধ্যে দিয়ে বাহিনী প্রেরণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শেষ করে নেওয়ার আশা তিনি করছেন। এর আগে ডিসেম্বর মাসে তেহরান সফরে গিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সম্মতি তিনি আদায় করে নিতে পেরেছেন। ফলে ধারণা করা হচ্ছে এবারের সফরে লক্ষ্য অর্জন জাপানের প্রধানমন্ত্রীর জন্য হবে অনেক বেশি সহজ। কেননা যে তিনটি দেশে তিনি যাচ্ছেন, জাপানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই কেবল এরা বজায় রাখছে না, একই সঙ্গে দেশগুলো হচ্ছে সেই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে জাপানকে মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রসীমায় টহলদার মিশনে যোগ দিতে হলেও জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী সরাসরি মার্কিন জোটের নিয়ন্ত্রণে থাকছে না এবং জাপানের বিমান ও জাহাজের অবস্থানও হবে উত্তেজনাপূর্ণ হরমুজ প্রণালি থেকে কিছুটা দূরে ওমান উপসাগর ও আশপাশের এলাকায়। মিশনের মূল অংশ হবে আত্মরক্ষা নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার তাকানামি, প্রধানমন্ত্রী সফর শেষ করে ফিরে আসার পর ফেব্রুয়ারির ২ তারিখে যেটা ২০০ জন ক্রু নিয়ে জাপান ত্যাগ করবে।

গত ২৭ ডিসেম্বর জাপানের মন্ত্রিসভা গবেষণা ও অনুসন্ধান মিশনের অংশ হিসেবে এক বছরের জন্য ডেস্ট্রয়ার ও টহলদার বিমান পাঠানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করে। ডেস্ট্রয়ার ও টহলদার বিমান ওমান উপসাগর ছাড়াও এডেন উপসাগরের অংশবিশেষেও টহল দেবে।

এদিকে জাপানের টহলদার বিমান জিবুতির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার আগে প্রায় ১০০ বিক্ষোভকারী ওকিনাওয়ার রাজধানী নাহায় এক সমাবেশে এর বিরোধিতা করেন। সমাবেশে দেওয়া ভাষণে ওকিনাওয়ার স্থানীয় পরিষদের একজন সদস্য বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকায় শেষ পর্যন্ত কী ঘটতে পারে, তা অজানা। তাই জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী প্রেরণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার মতোই।