ইরান চাইছে না সংঘাত

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ছবি: এএফপি
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ছবি: এএফপি

ইরানি জেনারেল কাশেম সোলাইমানির হত্যাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টান টান উত্তেজনার ১০ দিন পর সংঘাত এড়ানোর পক্ষে আভাস দিয়েছে ইরান। এর মধ্যে মার্কিন যুদ্ধবিমান ভেবে ভুল করে ইউক্রেনের উড়োজাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ভূপাতিত করা নিয়ে বিপাকে রয়েছে দেশটি। এ নিয়ে ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। গতকাল রোববার সফররত কাতারের আমিরের সঙ্গে বৈঠকে ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি সংঘাত এড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।

আজ সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে কাতারে। আবার ইরানের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে দেশটির। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্রটি ইরানের সঙ্গে ভাগাভাগি করছে কাতার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি ইরান সফরে এসেছেন। মনে করা হচ্ছে, ইরানে এটি তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর। চলমান সংকট সমাধানে তিনি মধ্যস্থতা করছেন বলেও মনে করা হচ্ছে।

হাসান রুহানির সঙ্গে আলোচনার পর শেখ তামিম বলেন, এই আঞ্চলিক সংকটের ‘একমাত্র সমাধান’ হিসেবে সংঘাত এড়ানোর পক্ষে তাঁরা একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষের সংঘাত এড়ানো আর সংলাপ চালিয়ে যাওয়া যে এসব সংকটের একমাত্র সমাধান, এ বিষয়ে আমরা একমত।’

রুহানি বলেন, এ অঞ্চলের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে...পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য আমরা আরও আলোচনা ও সহযোগিতা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

গতকাল ইরানের পার্লামেন্টে রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামি বলেন, গত বুধবার ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার উদ্দেশ্য মার্কিন সেনাদের হত্যা করা ছিল না। তিনি বলেন, ‘শত্রু সেনাদের হত্যা করা প্রকৃতভাবে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। সেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।’

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কোনো মার্কিন সেনা হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ইউক্রেনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শনিবার সন্ধ্যায় তেহরানে আমির কবির ইউনিভার্সিটির সামনে মোমবাতি প্রজ্বালন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শনিবার সন্ধ্যায় তেহরানে আমির কবির ইউনিভার্সিটির সামনে মোমবাতি প্রজ্বালন। ছবি: এএফপি

গত ৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদে বিমানবন্দরের কাছে যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের কুদস ফোর্সের প্রধান কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। এ হত্যার প্রতিশোধ নিতে ৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ইরাকে দুটি মার্কিন ঘাঁটি আল-আসাদ ও ইরবিলে ২২টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান।

গত বুধবার সকালে তেহরানে ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ উড্ডয়নমাত্র মার্কিন যুদ্ধবিমান মনে করে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে সেটিকে ভূপাতিত করে।

এতে উড়োজাহাজের ১৭৬ আরোহীর সবাই মারা যান। নিহত যাত্রীদের বেশির ভাগই ইরানি ও ইরানি বংশোদ্ভূত কানাডীয়। শুরুতে অস্বীকার করলেও পশ্চিমা চাপের মুখে গত শনিবার এক বিবৃতিতে ইরানের সামরিক বাহিনী ভুল করে উড়োজাহাজটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কথা স্বীকার করে। বিষয়টি গোপন করার ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যায় ইরানে সরকারবিরোধী তুমুল বিক্ষোভ হয়। এ অবস্থায় পরিস্থিতি ইরানের প্রতিকূলে চলে গেছে। আর সেই সুযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন ইরানের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন।

ট্রাম্প বিশেষ বিশেষ সময়ে তাঁর বড় হাতের ইংরেজি হরফে লেখার সেই স্টাইলে টুইট করে বলেছেন, ‘ ইরানের নেতাদের প্রতি—আপনাদের বিক্ষোভকারীদের হত্যা করবেন না।’

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপের বলেছেন, নতুনভাবে সামনের দিকে এগোনোর জন্য কোনো পূর্বশর্ত ছাড়া ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার এখনো ইচ্ছা রয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেওয়া পর্যন্ত কোনো আলোচনায় না বসার ব্যাপারে দৃঢ় রয়েছে ইরান।