কেটের সঙ্গে 'অন্যায় তুলনার' কারণেই সরে দাঁড়াচ্ছেন হ্যারি-মেগান?

ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটন ও ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেল। ছবি: এএফপি
ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটন ও ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেল। ছবি: এএফপি

প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান মার্কেল আকস্মিকভাবে কেন রাজকীয় দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি নিয়ে শুরু থেকেই চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এক পক্ষের বিশ্বাস, হ্যারি ও মেগানের প্রতি যুক্তরাজ্যের ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোর ক্রমাগত হয়রানিমূলক আচরণের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। এবার একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমও দাবি করেছে, ব্রিটিশ মিডিয়ায় কেট মিডলটনের সঙ্গে মেগানের ‘অন্যায় তুলনাই’ এই দম্পতিকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।

এর আগে হ্যারি ও মেগান নিজেরাই প্রকাশ্যে দাবি করেছিলেন, ব্রিটিশ মিডিয়া তাঁদের প্রতি অন্যায্য আচরণ করছে। দুজনের সম্পর্কের কথা চাউর হওয়ার পর থেকেই মিডিয়ার কাছে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন, এমনটাই দাবি তাঁদের। তাঁদের মনে হয়েছে, ভাই উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী কেটের চেয়ে তাঁদের ভিন্নভাবে দেখা হয়।

এবার ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলো (ডেইলি এক্সপ্রেস, দ্য ডেইলি মেইল, দ্য ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড, দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য টাইমস ও দ্য সান) কীভাবে কেটের প্রশংসা ও অযাচিতভাবে মেগানের সমালোচনা করে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাজফিড নিউজ ডট কম এক বিস্তারিত প্রতিবেদনে সেটি তুলে ধরেছে। একই ধরনের ঘটনায় রাজপরিবারের দুই বধূর প্রতি পত্রিকাগুলো কী রকম বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে, কতগুলো সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে সেটিই দেখানোর চেষ্টা করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

ডাচেস অব কেমব্রিজ ও প্রিন্স উইলিয়ামের স্ত্রী কেট মিডলটন যখন অন্তঃসত্ত্বা, ২০১৮ সালের ২২ মার্চ ডেইলি মেইল তাদের প্রতিবেদনে লিখেছিল, ‘ডাচেসকে তাঁর পেটে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে হাত বোলাতে দেখা গেছে। মা হতে যাওয়া উপলক্ষে তাঁকে ভীষণ আনন্দিত মনে হচ্ছে।’ অথচ মেগান যখন অন্তঃসত্ত্বা হলেন, সেই ডেইলি মেইলই ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ লিখেছিল, ‘গাড়িতে শিশু থাকলে যেমন পেছনে সতর্কতামূলক বার্তা লাগিয়ে রাখা হয়, মেগানকে তাঁর পেটে হাত বোলাতে দেখে তেমনটাই মনে হচ্ছে।’

অন্তঃসত্ত্বাকালে অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্ত্রী কেটকে অ্যাভাকাডো উপহার দিয়েছিলেন উইলিয়াম। ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এক্সপ্রেস তাদের প্রতিবেদনে লিখেছিল, ‘স্ত্রীর সুস্থতা কামনায় উইলিয়াম একটি শিশুকে দিয়ে তাঁর স্ত্রীর কাছে সবুজ ফল (অ্যাভোকাডো) উপহার পাঠিয়েছেন। ওই শিশুটির মাও গর্ভাবস্থায় একই রকমের অসুস্থতায় ভুগছেন। নিজের স্ত্রীর পাশাপাশি শিশুটির মায়েরও সুস্থতা কামনা করেছেন উইলিয়াম।’ বছর দেড়েক পরে মেগান অন্তঃসত্ত্বা থাকার সময় এক্সপ্রেসের লেখার ধরন গেল পাল্টে। পত্রিকাটি লিখেছিল, ‘অন্তঃসত্ত্বা ডাচেস অব সাসেক্স (মেগান) গোগ্রাসে অ্যাভোকাডো গিলছেন। অথচ এই ফলগাছটির কারণে পানির স্বল্পতা, অবৈধভাবে বন উজাড় ও পরিবেশের সামগ্রিক ক্ষতি হচ্ছে।

খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিনে রাজপরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে উদ্‌যাপন করাটাই রীতি। কিন্তু ২০১৬ সালের বড়দিনে কেট রাজপরিবারের সঙ্গে না থেকে নিজের পরিবারের সঙ্গে উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৬ ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে ডেইলি মেইল লিখেছিল, ‘রাজপরিবার সূত্রে জানা গেছে, বড়দিনে উইলিয়াম ও কেটের রাজপরিবারের সঙ্গে না থাকাকে রানি স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। রানির বরাত দিয়ে একটি সূত্র জানিয়েছে, অনেক তরুণ দম্পতিই এই দোটানায় ভুগে থাকেন। এ ছাড়া নিজের পরিবারের প্রতি কেটের গভীর টানের বিষয়টিও রানির অজানা নয়।’

অথচ গত বছর বড়দিনে যখন মেগান নিজের পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে চাইলেন, এই ডেইলি মেইলই ১৩ নভেম্বরের প্রতিবেদনে লিখেছিল, ‘উৎসবের সময় নিজের পরিবারের সবাইকে রানি পাশে চাইতেই পারেন। এটি রাজপরিবারের ঐতিহ্যও। হ্যারি ও মেগান বড়দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকলে সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক হবে।’

প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট যখন নিজেদের কোম্পানি খোলার সিদ্ধান্ত নেন, সেটির প্রশংসা করে ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ডেইলি মেইল লিখেছিল, ‘কেনসিংটন প্যালেস সূত্র জানিয়েছে, নিজেদের কোম্পানি খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে উইলিয়াম-কেট বিবেচকের মতো কাজ করেছেন।’ একই কাজ যখন মেগান আর হ্যারি করতে চাইলেন, ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি ডেইলি মেইল লিখল, ‘বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যারি ও মেগান রাজকীয় দায়িত্ব ছাড়তে চাইছেন বলেই নিজেদের ব্র্যান্ড খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

এ রকম আরও বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন পাশাপাশি দিয়ে বাজফিড নিউজ দেখিয়েছে, কীভাবে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলো উইলিয়াম-কেট ও হ্যারি-মেগান দম্পতির প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে।

গত বুধবার এক বিবৃতি দিয়ে রাজকীয় দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান। ‘সিনিয়র রয়্যাল’ উপাধি না নিয়ে তাঁরা স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকতে চান। সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় আছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দুই নাতি প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি। সে হিসাবে প্রিন্স উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী কেট, প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে বিবেচিত হন। যে কারণে তাঁদের নির্দিষ্ট কিছু রাজকীয় দায়িত্ব পালন করার বাধ্যবাধকতা থাকে। হ্যারি-মেগান এই জ্যেষ্ঠ সদস্যের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাই জানিয়েছেন। হ্যারি-মেগানের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেও রানি এলিজাবেথ চাইছেন, হ্যারি-মেগান দম্পতি রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে রাজকীয় দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করুন।