ধোঁয়া গ্রাস করবে সারা বিশ্ব

দাবানলের কারণে দিনের বেলায়ও আকাশ ধোঁয়াচ্ছন্ন। গতকাল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে।  ছবি: রয়টার্স
দাবানলের কারণে দিনের বেলায়ও আকাশ ধোঁয়াচ্ছন্ন। গতকাল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ায় কয়েক মাস ধরে চলা দাবানলের ধোঁয়া শিগগির সারা বিশ্ব ঘুরে আবার অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে আসবে। এই দাবানলের ধোঁয়া অন্তত একবার হলেও বিশ্ব প্রদক্ষিণ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) বিজ্ঞানীরা এ কথাই বলেছেন। 

অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় গত সেপ্টেম্বর থেকে দাবানলের আগুন জ্বলছে। দাবানলে এ পর্যন্ত ২৮ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরে পৌঁছে যাচ্ছে ভয়াবহ এই দাবানলের ধোঁয়া। এ বিষয়ে নাসা বলেছে, এবার খ্রিষ্টীয় নববর্ষের সময়ে অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের ধোঁয়া দক্ষিণ আমেরিকা অতিক্রম করে, তখন সেই এলাকার আকাশ ধোঁয়াশাচ্ছন্ন ছিল। দাবানলের ধোঁয়াই ৮ জানুয়ারিতে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক এলাকা প্রদক্ষিণ করে। 

 রেকর্ডকৃত তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের ধোঁয়া ১৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার উঁচুতে উঠে গেছে। অর্থাৎ ধোঁয়া বায়ুর পাঁচ স্তরের দ্বিতীয় স্তর স্ট্রাটোমণ্ডলে পৌঁছে গেছে। এ বিষয়ে নাসা বলেছে, একবার স্ট্রাটোমণ্ডলে ধোঁয়া পৌঁছাতে পারলে তা হাজার হাজার মাইল পেরোতে পারে এবং বিশ্বের বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতিকে তা প্রভাবিত বা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। 

নাসা আরও বলেছে, অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের কারণে সিডনি, মেলবোর্ন, ক্যানবেরাসহ দেশটির বড় বড় শহরের বায়ুর মান বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই দাবানলের ধোঁয়াতেই দক্ষিণ আমেরিকার আকাশের রং পরিবর্তন হয়েছে। নিউজিল্যান্ডে নাটকীয়ভাবে দাবানলের প্রভাব পড়ে। দেশটিতে বায়ুর মানের অবনতি হয়। দেশটির পর্বতশৃঙ্গগুলোর বরফ ভিন্ন রং ধারণ করেছে।

অস্ট্রেলিয়ায় এবারের নজিরবিহীন দাবানলের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবারও মেলবোর্নের বায়ুর মান টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিপজ্জনক পর্যায়ে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলনামূলক শীতল থাকা এবং সামান্য বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও গতকাল দেশটির পূর্ব উপকূলে শতাধিক জায়গায় দাবানলের আগুন জ্বলছিল।

বিজ্ঞানীদের হুঁশিয়ারি 

যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, উষ্ণতর বিশ্বে অর্থাৎ ভবিষ্যতে তাপমাত্রা বাড়লে কী ধরনের জলবায়ু সংকটের মধ্য দিয়ে বিশ্ব যাবে, এর একটি পূর্বলক্ষণ হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার চলমান দাবানল। অর্থাৎ দাবানল তখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হবে। 

 জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক যুক্তরাজ্যের মেট অফিস হাডলে সেন্টারের অধ্যাপক রিচার্ড বেটস অস্ট্রেলিয়ার দাবানল প্রসঙ্গে বলেন, ‘৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ভবিষ্যতের উষ্ণতর বিশ্বে যা হবে স্বাভাবিক পরিস্থিতি, এরই একটি দৃষ্টান্ত দেখছি আমরা।’

সারা বিশ্বে ঘটে চলা দাবানলের ঝুঁকির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছেন। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা মোট ৫৭টি গবেষণাপত্র বিচার-বিবেচনা করেছেন। প্রতিটি গবেষণাপত্রেই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে দাবানল বাড়ার সংযোগ সূত্র রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।