সেই মিয়ানমারের পাশেই চীন

মিয়ানমার সফরে গিয়ে দেশটির নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। মিয়ানমার, ১৮ জানুয়ারি। ছবি: রয়টার্স
মিয়ানমার সফরে গিয়ে দেশটির নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। মিয়ানমার, ১৮ জানুয়ারি। ছবি: রয়টার্স
>

সির দুই দিনের সফর। চীন-মিয়ানমার নতুন যুগের সূচনা, ৩৩টি চুক্তি স্বাক্ষর। রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘ আদালতের রায় ঘোষণার এক সপ্তাহ আগে মিয়ানমারে সি চিন পিং।

রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে মিয়ানমার যখন ক্রমেই একা হয়ে পড়ছে, তখন মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন যুগের সূচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। বছরের প্রথম বিদেশসফরে মিয়ানমারে গিয়ে এই প্রতিশ্রুতি দিলেন সি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে শত কোটি মার্কিন ডলার উন্নয়ন প্রকল্পের চুক্তি করে দেশটির বর্তমান সরকারের অবস্থান শক্তিশালী করা সির সফরের উদ্দেশ্য।

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) বিচার চলছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার করা একটি মামলার রায় হবে চলতি সপ্তাহে। এর আগে মিয়ানমারের সঙ্গে পাশে থাকার কথা জানাল চীন।

চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার দুই দিনের সফরে মিয়ানমারে যান সি। ওই দিন বিকেলে তাঁকে সংবর্ধনা দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট। এ সময় মিন্ট বলেন, বছরের শুরুতে সি মিয়ানমার সফর করায় সম্মানিত বোধ করছে তাঁর দেশের জনগণ। এ ছাড়া মিয়ানমারে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে’ সহযোগিতা করায় চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি।

দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সফর করছেন সি। সফরে মিয়ানমারের আতিথেয়তার প্রশংসা করেন সি। তিনি বলেন, এই কূটনৈতিক সম্পর্কের সুযোগ দুই পক্ষেরই নেওয়া উচিত। দুই পক্ষেরই ভালো প্রতিবেশীর মতো আচরণ অব্যাহত রাখা উচিত। এটা হতে পারে একই নৌকার দুই যাত্রীর মতো। তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মানুষ যাতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, জীবনযাপন করতে পারে এবং তারা যাতে নিজেদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারে, সেই জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত।

এদিকে মিয়ানমার অবকাঠামোগত উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে ৩৩টি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি এবং সি। তবে যে প্রকল্পগুলোর জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে, সেগুলো আসলে নতুন কিছু নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মিয়ানমার সরকার বেইজিংয়ের বিনিয়োগ এবং চলতি বছরের শেষ দিকের নির্বাচন নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তিগুলো স্বাক্ষর করা হয়েছে, এর মধ্যে চীনের উদ্যোগে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের প্রকল্পও রয়েছে। চীন এই উদ্যোগকে ২১ শতকের সিল্ক রোড হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ‘চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডরের’ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে দুই দেশ। এই করিডর প্রকল্পের মাধ্যমে শত শত কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হবে মিয়ানমারে। এর মধ্যে সহিংসতাপ্রবণ রাখাইন রাজ্যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ এবং দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার মধ্যে দ্রুতগতির ট্রেন স্থাপনের প্রকল্পও রয়েছে। ওই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মধ্য দিয়ে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত হবে চীন। এ ছাড়া মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে ‘নতুন শহর’ গড়ে তোলার প্রকল্পও রয়েছে। তবে কাচিন রাজ্যে ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে সেই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি সি এবং সু চি।