জনসমক্ষে রাহুল গান্ধীর 'সমালোচনা', দুদিন পর ব্যাখ্যা

রাহুল গান্ধী ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এএফপি
রাহুল গান্ধী ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এএফপি

পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে উঠে আসা রাহুল গান্ধীর পক্ষে কঠোর পরিশ্রমী নরেন্দ্র মোদিকে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়—এক সাহিত্য উৎসবে যোগ দিয়ে এমন কথাই বলেছিলেন প্রখ্যাত ভারতীয় ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্যের সমালোচনা হওয়ার পর এবার নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন রামচন্দ্র গুহ। বলেছেন, রাহুল গান্ধীর প্রতি কোনো ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকে নয়, বরং ‘মোদি, হিন্দুত্ববাদ ও ভারত’ নিয়ে বৃহত্তর প্রেক্ষিতে আলোচনা করতে গিয়েই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার কেরালা সাহিত্য উৎসবে যোগ দিয়ে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে মন্তব্য করেন রামচন্দ্র গুহ। মন্তব্য শুনে রামচন্দ্র গুহকে উদ্দেশ করে টুইট করেন কংগ্রেসের শশী থারুর। তাঁর টুইটের জবাব হিসেবে আজ রোববার একে একে আটটি টুইট করে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন রামচন্দ্র।

শশী থারুর তাঁর টুইটে বলেছিলেন, ‘আপনার বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ রামচন্দ্র গুহ। আপনি রাহুল গান্ধীর সম্পর্কে যা–ই ভাবুন না কেন, তিনি (রাহুল) ভারত সম্পর্কে এমন বিকল্পধারার চিন্তাভাবনা করেন, যে চিন্তা বিজেপিকে থামাতে আরও লাখ লাখ ভারতীয় করে থাকেন।’

থারুরের এমন টুইটের পর নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে রোববার সারা দিনে আটটি টুইট করেন রামচন্দ্র। টুইটগুলোতে তিনি বলেছেন, ‘কেরালা সাহিত্য উৎসবে দেওয়া আমার বক্তৃতা গণমাধ্যমে খণ্ডিতভাবে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে মোদি, হিন্দুত্ববাদ ও ভারত নিয়ে বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনার সময়ই ওই প্রসঙ্গ এসেছে।’

প্রখ্যাত ভারতীয় ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ গত শুক্রবার কেরালা সাহিত্য উৎসবে যোগ দিয়ে বলেছেন, রাহুল গান্ধীর পক্ষে নরেন্দ্র মোদিকে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত
প্রখ্যাত ভারতীয় ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ গত শুক্রবার কেরালা সাহিত্য উৎসবে যোগ দিয়ে বলেছেন, রাহুল গান্ধীর পক্ষে নরেন্দ্র মোদিকে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত

এরপর অবশ্য নিজের বক্তব্যের পেছনে যুক্তিও দাঁড় করিয়েছেন রামচন্দ্র গুহ। কেন রাহুল গান্ধীর বদলে জনগণ নরেন্দ্র মোদিকেই বেছে নেবে, সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আরেকটি টুইটে তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হলে ভোটাররা রাহুল গান্ধী নয়, বরং নরেন্দ্র মোদিকেই বেছে নেবেন। কারণ রাহুলের তুলনায় মোদি অনেক বেশি অভিজ্ঞ এবং রাজনীতির ময়দানে তিনি নিজেই নিজেকে গড়ে তুলেছেন।’

রাহুল কেন রাজনীতির লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছেন—আরেকটি টুইটে সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ৬১ বছর বয়সী রামচন্দ্র, ‘প্রশাসনিক দিকে রাহুলের অনভিজ্ঞতা এবং একটি রাজনৈতিক পরিবারের পঞ্চম প্রজন্মের সদস্য হওয়া তাঁর জন্য অনেক বড় অসুবিধা।’

তিনি নিজে যে মোদি সমর্থক নন—আরেকটি টুইটে সেটিও পরিষ্কার করে দিয়েছেন রামচন্দ্র গুহ। তিনি লিখেছেন, ‘অনেক বছর ধরেই আমি আমার কলামে মোদির নীতির তীক্ষ্ণ সমালোচনা করে আসছি। ১৯৮৯ সালের দাঙ্গায় ভাগলপুর যাওয়ার পর থেকেই আমি হিন্দুত্ববাদের ঘোর বিরোধী। আমার লেখা অনেক প্রবন্ধ, বই, টুইট, এমনকি বক্তব্যেও এর প্রমাণ রয়েছে এবং আমি এই সমালোচনা করতেই থাকব।’

গত শুক্রবার কেরালা সাহিত্য উৎসবে গিয়ে রামচন্দ্র গুহ বলেছিলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে রাহুল গান্ধীর বিরোধী নই। তিনি ভদ্র ও সচ্ছল মানুষ, তবে এটা সত্যি যে দেশের তরুণ প্রজন্ম লাগাতার রাজত্ব করে যাওয়া রাজতন্ত্রের মতো কোনো বংশের পঞ্চম পুরুষকে ক্ষমতায় চায় না। নরেন্দ্র মোদির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো তিনি রাহুল গান্ধীর মতো নন, নিজেকে নিজেই তৈরি করেছেন। ২০২৪ সালেও কেরলবাসী যদি আবার রাহুলকেই বেছে নেওয়ার মতো ভুল করেন, তবে তাঁরা আসলে পরোক্ষভাবে নরেন্দ্র মোদিরই সুবিধা করে দেবেন।’

২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তর প্রদেশের আমেথিতে হেরে গেলেও কেরালার ওয়ানাড আসন থেকে জেতেন রাহুল গান্ধী।