নাগরিক আইন নিয়ে ভারতের ওপর চাপ বাড়িয়েই চলেছে ইইউ

ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) ভারত স্পষ্ট জানাল, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) সম্পূর্ণভাবেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষে আলোচনার পর এই আইন পাস করা হয়েছে। ভারত এ কথাও জানাল, এই আইন কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য করা হয়নি। করা হয়েছে প্রতিবেশী তিন রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু অত্যাচারিতদের নাগরিকত্ব দিতে।

সিএএর বিরোধিতা করে ইইউ পার্লামেন্টে কাল মঙ্গলবার মোট ছয়টি প্রস্তাব পেশ হতে চলেছে। পার্লামেন্টের মোট ৭৫১ জন সদস্যের মধ্যে এই প্রস্তাবগুলোর পক্ষে রয়েছেন ৬২৬ জন। প্রতিটি প্রস্তাবের মূল কথা, ভারতের এই নতুন আইন ‘বৈষম্যমূলক ও বিভাজন সৃষ্টিকারী’ এবং এই কারণেই দেশের সংবিধানবিরোধী। প্রস্তাবগুলোয় এই কথাও বলা হয়েছে, ভারত সরকার প্রতিবাদীদের কণ্ঠরোধে সচেষ্ট। এসব প্রস্তাবে কাশ্মীরের ‘মানবাধিকার হরণের’ কথাও বলা হয়েছে।

প্রস্তাবগুলো যথেষ্ট কঠোর ও নিন্দাসূচক। কাল সেগুলো পেশ ও আলোচিত হবে। পরের দিন বুধবার প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটাভুটি হওয়ার কথা। তার আগেই ভারত কূটনৈতিকভাবে সচেষ্ট হয়ে উঠেছে। গতকাল রোববার রাতে সরকারের পক্ষে জানানো হয়, ইইউকে বাস্তব ঘটনা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আজ সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যের এই উদ্যোগের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানে সংখ্যালঘু হিন্দু ও শিখদের বলপূর্বক ধর্মান্তর ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে ইইউ সদস্যরা নীরব। অথচ তাঁরা যে আইনের বিরোধিতা করছেন, তা ভারতের বেশির ভাগ সাংসদের সমর্থনে আলোচনার পর গৃহীত হয়েছে। ভারত পাল্টা জানিয়েছে, ইউরোপও এভাবে এই ধরনের আইন প্রণয়ন করেছে। ভারতের আইন আদৌ বৈষম্যমূলক নয়। ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তাব পেশের আগে ইইউয়ের উচিত ছিল ভারতের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া।

সিএএ এবং জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে ইইউ সরব হওয়ায় ভারত চিন্তিত। দুই সিদ্ধান্তই দেশের সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন। আগামী মার্চ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলন। তাতে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্রাসেলস যাওয়ার কথা। ভারত চাইছে না, সেই সফরের আগে ইইউয়ের পার্লামেন্ট এমন কোনো প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিক। কারণ, তাতে ভারতের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপ আরও বেড়ে যাবে।

নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রতিবাদে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশটির সংবিধান হাতে বিক্ষোভে যোগ দেন অনেকে। গতকাল মুম্বাইয়ের একটি শহরতলিতে।  ছবি: রয়টার্স
নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রতিবাদে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশটির সংবিধান হাতে বিক্ষোভে যোগ দেন অনেকে। গতকাল মুম্বাইয়ের একটি শহরতলিতে। ছবি: রয়টার্স

ছয় প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছেন প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স অব সোশ্যালিস্ট অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটদের ১৫৪ জন সদস্য, ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টির (খ্রিষ্টান ডেমোক্র্যাটস) ১৮২ জন, ইউরোপিয়ান ইউনাইটেড লেফট ও নরডিক গ্রিন লেফটের ৪১ জন, গ্রিন ও ইউরোপিয়ান ফ্রি অ্যালায়েন্সের ৭৫ জন, কনজারভেটিভ ও রিফর্মিস্টদের ৬৬ জন এবং রিনিউ ইউরোপ গোষ্ঠীর ১০৮ জন সদস্য। সব মিলিয়ে প্রস্তাবগুলোর পক্ষে রয়েছে ৬২৬ জনের সমর্থন।

এর আগে দেড় শরও বেশি সাংসদ দাবি জানিয়েছিলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তিতে কড়া শর্ত আরোপ করা হোক। এবার পেশ হতে চলেছে মোট ছয়টি প্রস্তাব। এই সদস্যদের কেউ কেউ দক্ষিণপন্থী সাংসদদের কাশ্মীর ঘোরারও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিছুদিন আগে ওই সাংসদদের কাশ্মীর ঘোরাতে নিয়ে গিয়েছিল শাসক বিজেপি সরকার। ইউরোপিয়ান ফ্রি অ্যালায়েন্স গ্রুপ এক বিবৃতিতে ওই উদ্যোগের নিন্দা করে জানায়, মোদি সরকারের হিন্দু জাতীয়তাবাদী অ্যাজেন্ডা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উৎসাহ দিতেই ওই সফর ঠিক করা হয়েছিল।