ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা পুরোটাই ইসরায়েলের পক্ষে

মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা ঘোষণার সময় হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি
মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা ঘোষণার সময় হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি

দীর্ঘ বিলম্বের পর অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। পরিকল্পনার প্রায় পুরোটাই ইসরায়েলের পক্ষে। পরিকল্পনাটিকে তিনি ‘নতুন ভোর’–এর প্রতিশ্রুতি হিসেবে উল্লেখ করলেও ফিলিস্তিনিরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা এটাকে একপেশে এবং ‘ইতিহাসের ভাগাড়’ বলে মন্তব্য করেছে। 

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে ট্রাম্প এই মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, সেখানে দশকের পর দশক ধরে মার্কিন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও তাঁর এই পরিকল্পনা সফল হতে পারে।

উৎসাহী দর্শকদের সামনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন ভোর আনতে পারব।’ দর্শক সারিতে ইসরায়েলি ও ইহুদি আমেরিকান অতিথি ছিলেন। কোনো ফিলিস্তিন প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। ইসরায়েলের জন্য বেশি সুবিধা থাকা ওই পরিকল্পনাকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশেষ করে জেরুজালেম নিয়ে বিরাজমান সংকট এতে মেটেনি। ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেমকে পবিত্র নগরী বলে মনে করে, তারা নগরটিকে তাদের ভবিষ্যৎ রাজধানীও বলে থাকে। তবে মার্কিন পরিকল্পনায় এই জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ভাগাভাগির পরিবর্তে ‘অবিভক্ত’ রাজধানী হিসেবে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা বলেছে। পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরে গড়ে তোলা পত্তনগুলো ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ট্রাম্প ‘শান্তির পথে বড় পদক্ষেপ’ নেওয়ায় ইসরায়েলের প্রশংসা করেন। পরিকল্পনাটিতে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য একের পর কঠিন শর্ত পালনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সামরিক মুক্ত থাকতে হবে বলেও উল্লেখ রয়েছে পরিকল্পনায়। পাশাপাশি ইসরায়েলে অধিকৃত অঞ্চলের পত্তনগুলোতে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।

ভবিষ্যতের এই চিত্রের জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা বলেছেন ট্রাম্প, যা তাঁর মতে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা দূর করতে পারবে। সেই সঙ্গে তিনি ইসরায়েল যেন কখনো নিজেদের নিরাপত্তার সঙ্গে সমঝোতা না করে সেটার ওপরও জোর দিয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে আগের মার্কিন কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলোকে অসার উল্লেখ করে সমালোচনা করেন। ট্রাম্প জানান, তাঁর এই পরিকল্পনাটি ৮০ পৃষ্ঠার এবং এতে প্রস্তাবিত ভবিষ্যৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর জন্য মানচিত্র অঙ্কিত রয়েছে।

এই পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনিরা। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্রের চুক্তি কখনো বাস্তবায়িত হবে না। আমাদের জনগণ এটাকে ইতিহাসের আবর্জনায় ফেলে দেবে।’

বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। এখানে ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত ব্যাপক অঞ্চল গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরকে আলাদা করে ফেলেছে। এর ‘লাগোয়া’ অংশে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন তিনি। তবে মানচিত্রে দেখানো হয়েছে, পশ্চিম তীরকে ইহুদি বসতি স্থাপনের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গেই যুক্ত রাখা হয়েছে এবং একমাত্র একটি দীর্ঘ সড়ক সুড়ঙ্গের মাধ্যমে গাজা উপত্যকার সঙ্গে সংযোগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সবচেয়ে আলোচিত বিষয় জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্প বলেন, অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমের ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা উচিত। একই সময়ে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের মধ্যে ফিলিস্তিনকে একটি রাজধানী ঘোষণা করতে দেওয়া যেতে পারে।

গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস জানিয়েছে, তারা জেরুজালেমের ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতা মেনে নেবে না।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে লোকজন। রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৩ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি কট্টরপন্থীরাও ক্ষোভে ফোটে পড়েন। ইয়েমিনা ইউনিয়নের কট্টরপন্থী নেতা পরিবহনমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেন, তাঁর দল কোনোভাবেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়ে সম্মত হবে না।

ট্রাম্পের পরিকল্পনার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে।

পরিকল্পনা প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিন আরব দেশ ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের রাষ্ট্রদূতেরা। ট্রাম্পের দাবির পক্ষে মধ্যপ্রাচ্যে সমর্থন বাড়ার পক্ষে কিছু প্রমাণও তুলে ধরেন তাঁরা।

সৌদি আরব ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রশংসা করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সরাসরি আলোচনার আহ্বান জানান।
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো রাশিয়া পরিকল্পনাটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। দেশটির উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বগদানভ রাশিয়ার বার্তা সংস্থাগুলোকে বলেছেন, ‘আমরা জানি না আমেরিকান প্রস্তাবটি পরস্পরের কাছে গ্রহণযোগ্য নাকি গ্রহণযোগ্য না।’
নেতানিয়াহুর অফিস জানিয়েছে, তিনি বুধবার মস্কো যেতে পারেন। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা রয়েছে।
যুক্তরাজ্য ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে। তুরস্ক জানিয়েছে নিন্দা।