'ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা শান্তির নামে ষড়যন্ত্র'

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন ফিলিস্তিনিরা। এ সময় ইসরায়েলি বাহিনী তাঁদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। জবাবে একজন ফিলিস্তিনিকে গুলতি ছুড়তে দেখা যায়। গতকাল ইসরায়েল দখলকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে।  ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন ফিলিস্তিনিরা। এ সময় ইসরায়েলি বাহিনী তাঁদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। জবাবে একজন ফিলিস্তিনিকে গুলতি ছুড়তে দেখা যায়। গতকাল ইসরায়েল দখলকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে। ছবি: রয়টার্স
>ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাখ্যান। সাধুবাদ জানিয়েছে আরব বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ। প্রত্যাখ্যান ইরান, তুরস্ক, জর্ডানের।

ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ঐতিহাসিক। দশকের পর দশক ধরে সহিংসতা–সংঘাত চলে আসছে তাদের মধ্যে। দীর্ঘদিনের সেই সংঘাত অবসানে গত মঙ্গলবার একটি শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বহু কাঙ্ক্ষিত ওই পরিকল্পনায় শান্তি ফেরানোর ‘নতুন ভোর’ হিসেবে অভিহিত করেন ট্রাম্প। তবে ওই পরিকল্পনাকে ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট উল্লেখ করে ফিলিস্তিনিরা এটাকে শান্তির নামে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ট্রাম্পের পরিকল্পনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ইসরায়েলের পক্ষে হলেও ওই পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানিয়েছে আরব বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ। তবে ইরান, তুরস্ক ও জর্ডান বলেছে, ওই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায়। এতে আরও অশান্ত হয়ে উঠবে মধ্যপ্রাচ্য। তবে সব দেশেরই একই কথা, ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাত দুই রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সমাধান হোক।

ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনাতেও দুই রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সংঘাত মেটানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র যেহেতু স্বাধীন নয়, সেহেতু কীভাবে স্বাধীনতা পাবে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া নেয় পরিকল্পনায়। ফিলিস্তিনিদের জন্য ওই পরিকল্পনার বড় অস্বস্তি হচ্ছে, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের ‘অবিভক্ত রাজধানী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতি। মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিষ্টান—তিন ধর্মের মানুষেরই পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী মনে করেন ফিলিস্তিনিরা। তবে পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনের রাজধানীর কথা বলা হয়েছে পূর্ব জেরুজালেমকে। একই সঙ্গে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি দেওয়ায় ওই পরিকল্পনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে।

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পের ওই পরিকল্পনার বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মঙ্গলবারই। তিনি বলেন, ‘জেরুজালেম বিক্রির জন্য নয়। বিক্রি ও দর–কষাকষির সব অধিকার আমাদের নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেরুজালেম ছাড়া ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মেনে নেওয়া অসম্ভব। কোনো ফিলিস্তিনি, আরব, মুসলমান অথবা খ্রিষ্টান সন্তান এটা মেনে নেবেন না। আমরা হাজারবার বলতে পারি, না না না। আমরা শুরু থেকেই এই চুক্তি নাকচ করে আসছি।’

পরিকল্পনাটি দুই পক্ষের জন্যই সমান–সমান সুযোগ বলে ট্রাম্প দাবি করলেও পরিকল্পনাটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন ফিলিস্তিনিরা। গাজায় ক্ষমতায় থাকা ফিলিস্তিনের ইসলামি আন্দোলন হামাসের কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেছেন, ট্রাম্পের ঘোষণা আগ্রাসন ও ষড়যন্ত্র। এটা ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে দেবে। জেরুজালেম সমন্ধে ট্রাম্পের ঘোষণা অর্থহীন। জেরুজালেম সব সময়ই ফিলিস্তিনের ভূমি থাকবে। ফিলিস্তিনিরা এই চুক্তিকে প্রতিহত করবে।

ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার প্রতিবাদে পশ্চিত তীরের নাবলুস, গাজাসহ বিভিন্ন স্থানে গতকাল বুধবার বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনিরা।

ট্রাম্প ওই পরিকল্পনা ঘোষণা দেওয়ার পর গতকাল খুব সকালে প্রথম কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আব্বাসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান। এ সময় তিনি ফিলিস্তিনিদের বিভিন্ন বিষয় ও অধিকারের বিষয়ে সৌদি আরবের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এর আগে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি দেয়।

কাতার শান্তি পরিকল্পনার এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সম্মতি ছাড়া প্রস্তাব মেনে নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দেশটি। আর যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত বলেছে, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে।

তবে সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ট্রাম্পের ‘শান্তি প্রস্তাব’ প্রত্যাখ্যান করেছে। চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনের ভূমি দখলের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফিদি। ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল একে পার্টির ডেপুটি চেয়ার‍ম্যান নুমান কার্তুলমাস বলেছেন, জেরুজালেমই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী। এক বিবৃতিতে মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের প্রস্তাব সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মুখপাত্র ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলেছেন। ফ্রান্স দুই রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সংকট সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় দুই রাষ্ট্র গঠনকে সমর্থন করে জাতিসংঘ।