ব্রেক্সিট নিয়ে জার্মানির মন্ত্রীর আবেগঘন চিঠি

রয়টার্স ফাইল ছবি।
রয়টার্স ফাইল ছবি।

যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে চলে যাচ্ছে তবু আমরা একই নৌকার যাত্রী। কারণ মিলেমিশে কাজ করলে আমাদের পরিবেশ বা বিশ্বশান্তি সবকিছুতেই আমরা সাফল্য পাব। এই বিচ্ছেদের দিনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাশ এক আবেগঘন চিঠি লিখে এমন মন্তব্য করেছেন। চিঠিটি প্রকাশের জন্য পত্রিকাগুলোতে পাঠিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী লিখেছেন:

প্রিয় ব্রেক্সিট,
সবাই শান্ত থাকুন এবং এগিয়ে যান, আমি জানি এই বিচ্ছেদ অনেকের জন্য কষ্টদায়ক। আমাদের সবার জন্যই বিষয়টি স্বস্তিদায়ক নয়। ব্রেক্সিট থাকুক বা না থাকুক-ব্রিটিশরা সব সময় সুস্থির ও ঠান্ডা মাথায় চিন্তার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। আমাকে সরাসরি জার্মান রীতিতে বলার অনুমোদন দিলে আমি বলব, আমরা ব্যথিত, যে আপনারা শুধু জোট ত্যাগ করছেন না। আপনারা ৬ কোটি ৬০ লাখ ইউরোপীয় নাগরিক এবং একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক বলয় ত্যাগ করলেন।

আপনারা সব সময় বৈশ্বিক যুক্তরাজ্য ছিলেন, যা ইউরোপের জন্য ইতিবাচক বিষয় ছিল। আপনাদের বাস্তববাদিতা, সহনশীলতা এবং রসবোধ কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনাদের জেদি ভূমিকা এই সব কিছুই আমরা এখন থেকে মিস করব।

ব্রেক্সিট গণভোটের পর থেকেই বিষয়গুলো সহজ ছিল না। ব্রাসেলসে দিনের পর দিন আলোচনা হতো। জটিল জটের সমাধান হতো। ওয়েস্টমিনিস্টারে দীর্ঘসময় ধরে বিতর্ক আর স্পিকারের অর্ডার অর্ডার বলে চিৎকার শোনা যেত। এসব কিছু আমার যৌবনকালে শোনা ব্রিটিশ পাঙ্ক রক হিটের মতো ‘সুড আই স্টে, সুড আই গো’, ‘আমার কি থাকা উচিত? নাকি আমার যাওয়া উচিত?’ গানটির মতো মনে হতো।

আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পাদন করেছি। না হলে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ যারা গ্রেট ব্রিটেন বা ইউরোপে বসবাস, চাকরি বা পড়াশোনা করছেন তাঁদের স্বাধীনতা ও চলাচল খর্ব হতো। যেসব ইউরোপীয় নাগরিক, যুক্তরাজ্য বা ইউরোপের অন্য কোনো দেশে তাঁদের জীবন গড়ে তুলেছেন, তাঁরা যেন সেখানেই থাকতে পারে বা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত আমাদের পরিবর্তনকালীন সময় হাতে রয়েছে। যাতে এসব বিষয়ের সমাধান হতে পারে। উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমান্তে ব্যাকস্টপ বিষয়টিও হয়তো সমাধান হবে।

আজকে আমার কাছে ব্রেক্সিট, বিটলসের গানের মতো হ্যালো, গুডবাইয়ের মতো শোনাচ্ছে। হ্যালো আবার নতুন করে শুরুর আহ্বান। আমাদের সম্পর্ক অবশ্যই বদলিয়ে যাবে, তবে কতটা পরিবর্তিত হবে তা আমাদের নিজেদের ওপর নির্ভর করবে। তবে আমি জার্মানির পক্ষে বলতে পারি, ব্রেক্সিট হলেও আমাদের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক অটুট থাকবে। আদতে আমরা একই মহাদেশের মানুষ এবং আমরা সবাই ইউরোপীয় মূল্যবোধকে রক্ষা ও জলবায়ু, মানবাধিকার, ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও ইউরোপীয় সুরক্ষার প্রশ্নে সবাই একই নৌকার যাত্রী।

আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য ভবিষ্যতে ১১ মাস সময় রয়েছে। এই বছর শেষ হওয়ার আগেই, শুল্কবিহীন বাণিজ্য, ভিসামুক্ত ভ্রমণ, চাকরির সুযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আদান প্রদান, সন্ত্রাসবাদ, আন্তর্জাতিক সংকটগুলির মোকাবিলা প্রভৃতি বিষয়গুলো পরিষ্কার হওয়া উচিত। এই বিষয়গুলো সফল করতে হলে উভয় পক্ষকেই উদার ও আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলতে হবে।

সাম্প্রতিককালের বৈশ্বিক সংকটে ব্রিটিশ, জার্মানি ও ফ্রান্স একযোগে কাজ করেছে। পারমাণবিক সজ্জিত ইরানকে চুক্তির বিষয়ে, ব্রিটিশ ও জার্মানরা ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একত্রে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা একই কৌশলগত লক্ষ্যে পশ্চিম বলকানে স্থিতিশীলতার পাশাপাশি লিবিয়া, সিরিয়াই এবং ইউক্রেনের শান্তির ক্ষেত্রে একইভাবে কাজ করেছি। আমরা যদি নিজেরা বিভক্ত হই, তাতে ইউরোপীয় প্রভাব হ্রাস পাবে।

বিখ্যাত ব্রিটিশ সংগীত দল বিটলস গেয়েছিলেন, ‘আপনি বিদায় জানান, আমি বলব হ্যালো।’ আমরা বিদায়কে বেছে নিয়েছি, তবে বিষয়টি যেন প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়। আপনাদের জন্য সব সময় ব্রাসেলসে জায়গা থাকবে। আর আপনারা আমাদের হৃদয়ে থাকবেন। সুতরাং আসুন হ্যালো, আমাদের ভবিষ্যৎ হোক বিচ্ছেদ, তবু আমরা একই নৌকার যাত্রী।