এখনই এনআরসি নয়, জানাল মোদি সরকার

দেশজোড়া আন্দোলনের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার জানাল, এখনই সারা দেশে এনআরসি তৈরির কোনো সিদ্ধান্ত তারা নেয়নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই আজ মঙ্গলবার লোকসভায় এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

নতুন লোকসভা গঠনের সময় গত জুন মাসে সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেছিলেন, তাঁর সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সিএএ এবং এনআরসির কাজ শেষ করবে। গত ১১ ডিসেম্বর সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল (সিএবি) নিয়ে আলোচনার সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, সিএবি পাস হওয়ার পর সারা দেশে এনআরসি করা হবে। তিনি এ কথাও বলেছিলেন, ২০২৪ সালের মধ্যেই দেশে এনআরসির কাজ শেষ হবে। এরপর সিএবি পাস হয়।

এর পরপরই সিএএ এবং এনআরসির বিরুদ্ধে আন্দোলনও তীব্রতর হয়ে ওঠে। ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যে রাজ্যে। গত ২২ ডিসেম্বর দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনী প্রচার শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রামলীলা ময়দানের জনসভায় জানান, এনআরসি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। সারা দেশে কোনো বন্দিশিবিরও তৈরি করা হয়নি। সেই থেকে বিজেপি ও মোদি সরকার এনআরসি নিয়ে সাময়িকভাবে পিছু হটছে। এবার বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি যে উদ্বোধনী ভাষণ দেন, সেখানেও তিনি সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। আজ লোকসভাতেও সরকার সে কথা জানাল।

কিন্তু এখানেও নাটকের অভাব ছিল না। বিজেপির কর্ণাটকের নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত হেগড়ে দুদিন আগে এক জনসভায় মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহকে কটাক্ষ করে একে ‘নাটকবাজি’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এমন একজনকে কেন ‘মহাত্মা’ আখ্যা দেওয়া হয়, তা তাঁর বোধগম্য হয় না। বিজেপির মন্ত্রী এ কথাও বলেন, স্বাধীনতাসংগ্রামের নামে গান্ধী ব্রিটিশদের দালালি করতেন। ওই কারণে ব্রিটিশ পুলিশ কখনো তাঁকে লাঠিপেটাও করেনি। এই মন্তব্য নিয়ে আজ লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই কংগ্রেস সরব হওয়া মাত্র স্পিকার ওম বিড়লা সভা এক ঘণ্টার জন্য মুলতবি করে দেন। যে স্পিকার তুমুল হট্টগোল সত্ত্বেও সভা মুলতবি করেন না, তিনিই কেন হঠাৎ এমন করলেন? সেই রহস্যের উত্তর মিলল সঙ্গে সঙ্গেই।

দেখা গেল আজকের লিখিত প্রশ্নের তালিকার প্রথমটিই এনআরসি-এনপিআরসংক্রান্ত। লিখিত প্রশ্নের লিখিত জবাবের পর অতিরিক্ত প্রশ্ন নেওয়া সংসদীয় রীতি। সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উপস্থিত। তাঁকে এনআরসি ও এনপিআর নিয়ে যাতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সেই জন্যই স্পিকার এক ঘণ্টার জন্য সভা মুলতবি করে দেন। এক ঘণ্টা পর দুপুর ১২টায় সভা ফের শুরু হলে আরও হট্টগোল সত্ত্বেও স্পিকার সভা মুলতবি করেননি। ফলে কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধীরা ওয়াক আউট করেন।

এ সময় লিখিত প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই বলেছেন, ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার বা এনপিআর তৈরির জন্য যাঁরা বাড়ি বাড়ি যাবেন, তাঁরা কোনো নথি চাইবেন না। আঁধার কার্ড দেওয়াও ঐচ্ছিক। এনপিআরে নাগরিকত্বও যাচাই করা হবে না।

বহু রাজ্য ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, তারা এনপিআর করতে দেবে না। কারণ, এনপিআর হলো এনআরসির প্রথম ধাপ।