করোনা চিকিৎসায় ব্যস্ত মা, দূর থেকে মেয়েকে আলিঙ্গনের ভিডিও ভাইরাল

মেয়েকে আলিঙ্গনের জন্য দূরে দাঁড়িয়ে মা। ছবি: টুইটার
মেয়েকে আলিঙ্গনের জন্য দূরে দাঁড়িয়ে মা। ছবি: টুইটার

চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে রাতের ঘুম হারাম চিকিৎসক ও নার্সদের। তাঁদের অধিকাংশ সময় কাটছে হাসপাতালেই। রোগ এতটাই ছোঁয়াচে যে রোগীর সঙ্গে প্রায় এক ঘরে হয়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। পরিবার ও প্রিয়জনদের থেকে আলাদা থেকে চিকিৎসা দেওয়া এক নার্সের সঙ্গে তাঁর মেয়ের দূর থেকে আলিঙ্গনের আবেগঘন ভিডিও তাই হয়েছে ভাইরাল। নেটিজেনরা সবাই তাঁদের কুর্নিশ জানাচ্ছে।

সম্প্রতি মা ও মেয়ের দূর থেকে করা আলিঙ্গনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আবেগঘন এ ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে নেটিজেনদের মধ্যে। মন জয় করে নিয়েছে অনেকের।

মা লিউ হাইয়ান করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসায় ব্যস্ত। নয় বছরের মেয়ের সঙ্গে দেখা নেই কয়েক দিন ধরে। ৩১ জানুয়ারি মেয়ে চেং শিওয়েনের সঙ্গে সর্বশেষ দেখে হয়েছে মা লিউয়ের। করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগ হওয়ায় কোনো সুস্থ কারও সংস্পর্শে আসা যাবে না। কিন্তু মা ও নয় বছরের শিশু মেয়ের তো দেখা হওয়া দরকার। মা লিউ হাইয়ানের সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে আসে চেং শিওয়েন। দুজনেরই মুখ ও মাথায় রোগ প্রতিরোধকারী মাস্ক। ছোঁয়াচে রোগে মেয়ে সংক্রমিত হতে পারে, তাই মা ও মেয়ে দূর থেকে দেখা ও কথা বলেছেন। আলিঙ্গন পর্যন্ত করতে পারেননি। মা ও মেয়ে একে অপরের সঙ্গে দূর থেকেই আলিঙ্গন করেছেন। কারণ, শারীরিকভাবে তাঁরা আলিঙ্গন করতে পারবেন না। লিউ মেয়েকে আশ্বাস দেন যে করোনাভাইরাসের লড়াইয়ে জয়ী হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যাবেন।

লিউ হাইয়ান চিনের হেনান প্রদেশের ফুগউ পিপলস হাসপাতালে গত মাস থেকে করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা কাজ করছেন। লিউয়ের নয় বছরের মেয়ে চেং শিওয়েনের সঙ্গে ১০ দিন পর দেখা করেন হাসপাতালে। মা ও মেয়ের দূরত্বের কারণ এ রোগ সংক্রমিত হওয়ায় কোনোও সুস্থ কারও সংস্পর্শে আসা যাবে না। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, চেং তাঁর মা লিউয়ের সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে আসে। দুজনেরই মুখ ও মাথায় মাস্ক পরা। চেং শিওয়েন কাঁদতে কাঁদতে মাকে বলে, ‘মা, তোমার কথা খুব মনে পড়ছে আমার।’ উত্তরে মা বলেন, ‘মা এখন দৈত্যের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। ভাইরাসটাকে শেষ করেই আমি জলদি বাড়ি ফিরব।’ এরপর মা-মেয়ে একে অপরের সঙ্গে দূর থেকেই আলিঙ্গন করেন। কারণ, শারীরিকভাবে তাঁরা আলিঙ্গন করতে পারবে না। এরপর নার্স তাঁর মেয়েকে ভালোভাবে থাকতে বলে তাঁর দিকে হাত নেড়ে চলে যান। লিউ হাইয়ান মেয়েকে আশ্বাস দেন যে করোনাভাইরাসের লড়াইয়ে জয়ী হয়ে তিনি বাড়ি ফিরবেন।

ভিডিও শেষ হওয়ার আগে দেখা যায়, মায়ের জন্য বাড়ির তৈরি খাবার টিফিনবক্সে করে এনেছে চেং শিওয়েন। চেং শিওয়েন ওই খাবার রেখে দেয় হাসপাতালের সীমান্তে। লিউ হাইয়ান সেখান থেকে টিফিন বক্সটা নিয়ে যায়। আবেগঘন এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই এই ভিডিও ২ মিলিয়ন মানুষ দেখেছে।

কয়েক দিন দেখা নেই, মায়ের জন্য কাঁদছে শিশু। ছবি: টুইটার
কয়েক দিন দেখা নেই, মায়ের জন্য কাঁদছে শিশু। ছবি: টুইটার

অনেকেই মা-মেয়ের এ ভালোবাসাকে কুর্নিশ জানিয়েছে। মা ও মেয়ের দেখা হবে শিগগিরই, সে দোয়াও করেছেন অনেকেই।

একজন বলেছেন, ‘এটা বেদনার ঘটনা। এটা মর্মস্পর্শী। আমার আশা, মা ও মেয়ে শিগগিরই আলিঙ্গন করবেন। সবাই এ রোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পাবেন।’

অপর এক নেটিজেনের মন্তব্য, এ ভিডিও দেখার পর চোখের পানি ধরে রাখা মুশকিল। চীনের প্রতিটি পরিবার কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে এটা দীর্ঘমেয়াদি নয়, সবকিছুই দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।

১৭ বছরে আগের এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে এক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘সার্সভাইরাসের সময় ঠিক প্রায় এমনটাই আমার সঙ্গে হয়েছিল।’

অপর একজন বলেছেন, ‘আমি এদের সাহায্য করতে পারব না জানি। কিন্তু আমি তাদের জন্য কাঁদতে তো পারি। ওই নার্সের জন্য টুপিখোলা অভিনন্দন।’

নতুন করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল বলে পরিচিত চীনের হুবেই প্রদেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণে সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, এ রোগে মারা গেছেন ৮০৩ জন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মোট মৃত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০৩। একজন ছাড়া অন্যদের প্রাণহানি চীনের মূল ভূখণ্ড ও হংকংয়ে ঘটেছে। তথ্যসূত্র: সিনহুয়ার টুইটার অ্যাকাউন্ট ও গালফ নিউজ