অনির্দিষ্টকাল ধরে অবরোধ করা যায় না, শাহিনবাগ নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

দিল্লির শাহিনবাগে নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিক নিবন্ধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ছবিটি গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে তোলা। রয়টার্স
দিল্লির শাহিনবাগে নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিক নিবন্ধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ছবিটি গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে তোলা। রয়টার্স

ভারতের দিল্লির শাহিনবাগ অবরোধ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বললেন, অনির্দিষ্টকাল ধরে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো যায় না। প্রতিবাদ জানাতে হলে নির্দিষ্ট স্থানেই তা করতে হবে। ১৭ ফেব্রুয়ারি শাহিনবাগ–সম্পর্কিত মামলার পরবর্তী শুনানি। মনে করা হচ্ছে ওই দিনেই প্রায় দুই মাসব্যাপী এই অবরোধ–আন্দোলন সম্পর্কে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত তাঁর রায় জানাবেন। সংবাদমাধ্যম পিটিআই এই খবর জানিয়েছে।

শাহিনবাগ আন্দোলনে অংশ নেওয়া চার মাসের এক শিশুর মৃত্যু নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অন্য একটি মামলা গ্রহণ করেছেন। সেই বিষয়ে দিল্লি ও কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাব জানাতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) প্রত্যাহার এবং জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন তৈরির (এনআরসি) বিরোধিতা করে দিল্লির শাহিনবাগের স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায় দুই মাস ধরে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, এত দিনেও সরকার তাঁদের সঙ্গে কথা বলেনি। পথ অবরোধের ফলে ওই অঞ্চলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। এ কারণে আইনজীবী অমিত সাহনি ও নন্দ কিশোর গর্গ দিল্লি হাইকোর্টে এক জনস্বার্থ মামলা করেন। দিল্লি ভোটের আগে হাইকোর্ট জানান, দিল্লি পুলিশকেই এর মোকাবিলা করতে হবে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। আবেদনকারীরা এরপর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। দিল্লি বিধানসভা ভোটের আগে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি বিবেচনায় নিতে রাজি হননি। আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এস কে কল ও বিচারপতি কে এম যোসেফ জানান, জনগণ ব্যবহার করে, এমন জায়গায় দীর্ঘকাল ধরে এমনভাবে বিক্ষোভ দেখানো যায় না। জনগণ ব্যবহার করে, এমন রাস্তা এভাবে বন্ধ রাখা ঠিক নয়। বিক্ষোভ সরকার–নির্দিষ্ট স্থানেই দেখানো উচিত।

সুপ্রিম কোর্ট এই মনোভাব দেখালেও একতরফা আবেদনের ভিত্তিতে রায় জানাতে চাননি। তাই কেন্দ্রীয় সরকার ও দিল্লি পুলিশকেও সর্বোচ্চ আদালত নোটিশ পাঠিয়েছেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি ধার্য হয়েছে পরবর্তী শুনানির দিন। এ বিষয়ে আবেদনকারীদের উদ্দেশে বিচারপতিরা বলেন, এত দিন যখন অপেক্ষা করা গেছে, তখন আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করা যেতেই পারে।

শাহিনবাগে বিক্ষোভরত এক নারীর চার মাসের শিশু ঠান্ডায় মারা যায়। সেই খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে মুম্বাইয়ের স্কুলছাত্রী জেন গুররতন সদাভার্তে (১২) সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদেকে এক চিঠি লেখে। সাহসিকতার জাতীয় পুরস্কারজয়ী এই কিশোরী চিঠিতে লেখে, সদ্যোজাত শিশুদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। তাদের বিক্ষোভস্থলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পুলিশও তাদের রুখতে ব্যর্থ। ছাত্রীর দাবি, শিশুদের বিক্ষোভস্থলে নিয়ে যাওয়া বন্ধ করা হোক।

প্রধান বিচারপতি ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বিবেচনা করেন। সোমবার এ বিষয়ে তিনি খুবই কড়া মনোভাব দেখান। দিল্লি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে অভিমত জানাতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

বিক্ষোভকারী নারীদের পক্ষে আইনজীবীরা যখন বলেন, শিশুরা প্রতিবাদে শামিল হয়েছে কারণ, স্কুলে তাদের ‘পাকিস্তানি’ বলা হচ্ছে। ‘গদ্দার’ ডাকা হচ্ছে। ‘দেশদ্রোহী’ বলা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি এ সময় বলেন, ‘আমরা সিএএ বা এনআরসির বিচার করতে বসিনি। পাকিস্তানি বা দেশদ্রোহী কি না, দেখতে বসে নেই। আমার প্রশ্ন, চার মাসের শিশুকে কি এভাবে বিক্ষোভে নিয়ে যাওয়া যায়?’