মমতা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালাতে পারবেন?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) কার্যকর হতে দেবেন না। মমতার ভাষ্য, এই আইন রাজ্যে কার্যকর করতে হলে তাঁর লাশের ওপর দিয়ে করতে হবে।

রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআরবিরোধী আন্দোলন চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, মমতা শেষ পর্যন্ত এই লড়াই চলিয়ে যেতে পারবেন কি না? মমতা বলেছেন, রণে ভঙ্গ দেওয়ার ইতিহাস তাঁর নেই। আছে তাঁর সংগ্রামের ইতিহাস, মাথানত না করার ইতিহাস। তাই তিনি হারবেন না। লড়াই চালিয়ে যাবেন। অসাম্প্রদায়িক ভারতে তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার পতাকা তুলে ধরে রাখবেন। ভারতকে কখনো সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে রূপ দিতে দেবেন না। প্রয়োজনে জীবন দেবেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই সিএএ নিয়ে সোচ্চার। সংসদে এই বিল পাস করতে দেবেন না বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সংসদে মোদি সরকার মমতার দাবি উপেক্ষা করেই সিএবি বা ক্যাব পাস করে। কারণ, সংসদে মমতার দল তৃণমূলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না।

সংসদে সংশোধনী বিল পাস ও রাষ্ট্রপতির সইয়ের পর সিএএ বিল আইনে রূপান্তরিত হয়।

মমতা সিএএ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন আরও জোরদার করেছেন। মমতার আন্দোলনের মুখে সিএএর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে কংগ্রেস, বাম দল এবং বিভিন্ন রাজ্যের মোদিবিরোধী রাজনৈতিক দল।

গত ৮ জানুয়ারি দেশের ১৭টি রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠন দেশজুড়ে মোদি সরকারের শ্রমিকবিরোধী নীতি এবং সিএএ, এনআরসি ও এনপিআরের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টা বন্‌ধের ডাক দেয়। এই বন্‌ধ্‌কে সমর্থন করে কংগ্রেস। তবে মমতা এই বন্‌ধের বিরোধিতা করেন। পশ্চিমবঙ্গে এই বন্‌ধ্‌ অনেকটাই সফল হয়। আর এটাই মেনে নিতে পারেননি মমতা।

গত ১২ জানুয়ারি সিএএ, এনআরসি ও এনপিআর প্রত্যাহারের দাবিতে দিল্লিতে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করার জন্য বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলের এক বৈঠক ডাকেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু সেই বৈঠকে যোগদান না করার ঘোষণা দেন মমতা।

ওই বৈঠকের আগের দিন ১১ জানুয়ারি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কলকাতা সফরে আসেন। মমতা কলকাতার রাজভবনে গিয়ে দেখা করেন মোদির সঙ্গে। বৈঠকও করেন।

ভারতের বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের মধ্যেই ৩১ জানুয়ারি সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে তৃণমূলের সাংসদেরা নো সিএএ, নো এনআরসি প্লাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানান। সেদিন দলে অবশ্য তৃণমূল ছাড়া আর কেউ ছিল না। ওই একই সময় সংসদ ভবনের সামনে গান্ধীমূর্তির পাশে অবস্থান ধর্মঘটে বসেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী-রাহুল গান্ধীরা। এই অবস্থান ধর্মঘটে যোগ দেয় বিজেপিবিরোধী দল বাম দল, সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকেসহ আরও কয়েকটি দল।

মোদির সঙ্গে মমতার বৈঠক এবং ১২ জানুয়ারি দিল্লিতে সোনিয়ার ডাকা বৈঠকে যোগ না দিয়ে মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রয়োজনে বিজেপির বিরুদ্ধে তিনি একাই লড়াই চালিয়ে যাবেন।

রাজনৈতিক মহল এসব ঘটনার পর মনে করছে, এবার কেউ না এলেও মমতা একাই সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআরবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। কারণ, ইতিহাস বলছে, মমতা পারেন। মমতা মাথা নত করতে জানেন না। লড়াইয়ের ময়দানে থেকে জয় ছিনিয়ে আনতে পারেন। তাই মমতা পিছপা হওয়ার নেত্রী নন।