পথচারীরা জানে না তাদের ফেলা চুইংগামে কী শিল্পকর্ম হচ্ছে

পরিত্যক্ত চুইংগাম দিয়ে উজ্জ্বল বর্ণের এসব শিল্পকর্মের স্রষ্টা যুক্তরাজ্যের বেন উইলসন। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
পরিত্যক্ত চুইংগাম দিয়ে উজ্জ্বল বর্ণের এসব শিল্পকর্মের স্রষ্টা যুক্তরাজ্যের বেন উইলসন। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

যুক্তরাজ্যের লন্ডনের টেমস নদীতে বানানো সেতুর পদচারী অংশে দেখা গেল নিবিষ্ট মনে কিছু করছেন একজন। পাশের ইস্পাতে লাগানো উজ্জ্বল বর্ণের ছোট ছোট শিল্পকর্ম। এসব শিল্পকর্ম মুদ্রার আকারের মতো। ভালো করে খেয়াল না করলে মানুষ বুঝতেই পারবে না এসব আসলে কী। আর ভালোভাবে খেয়াল করলেও বোঝা কঠিন যে এগুলো আসলে পরিত্যক্ত চুইংগাম দিয়ে বানানো শিল্পকর্ম।

চলার পথে রাস্তাঘাটে মানুষ মুখ থেকে চুইংগাম ফেলে। সেগুলো সংগ্রহ করে নানা কায়দায় এ শিল্পকর্মগুলো যিনি তৈরি করেন, তাঁর নাম বেন উইলসন। পথচারীরা চলতি পথে যেসব চুইংগাম ফেলে যায়, সেগুলো সংগ্রহ করেন ৫৭ বছর বয়সী এই শিল্পী। ১৫ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। পরিত্যক্ত চুইংগাম দিয়ে ছোট ছোট ডায়াস বানিয়ে তাতে ছবি আঁকেন তিনি।

মনে হতে পারে, বেন উইলসনের এটা খামখেয়ালি। বিষয়টা তা নয়। এটা শখের বশে করা কোনো কাজ নয়। শিল্পের একটি ধারা তিনি বানিয়েছেন। আর সেটার প্রতি তিনি খুবই মনোযোগী। বেন উইলসন এটাকে রিসাইক্লিংয়ের পাশাপাশি শিল্পের একটি ধরন বলেই মনে করেন। চুইংগামের ডায়াসে আঁকতে আঁকতে বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলছিলেন, ‘আমি পরিত্যক্ত ময়লাকে রূপান্তর করে শিল্পের রূপ দিচ্ছি। রিসাইক্লিং যেমন হচ্ছে, শিল্পও হচ্ছে।’

টেমস নদীর ওপরে সেতুর হাঁটাহাঁটির অংশের ইস্পাতের গায়ে উজ্জ্বল রঙের শিল্পকর্মগুলো শোভা ছড়াচ্ছে। তুলির আঁচড়ে চুইংগামের ডায়াসে বেন উইলসন ফুটিয়ে তুলেছেন নানা দৃশ্য। উত্তর লন্ডন থেকে আসা এই শিল্পী শুরুতে কাঠ খোদাই করে নকশা করতেন। পরে তিনি চুইংগাম নিয়ে কাজ শুরু করেন। তাঁর কাজ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। লোকে এখন তাঁকে ‘চুইংগাম ম্যান’ হিসেবে চেনে।

বেন উইলসনের কাজটা বেশ জটিল। প্রথমে তিনি রাস্তাঘাটসহ আশপাশের এলাকা থেকে পুরোনো চুইংগাম সংগ্রহ করেন। এরপর রংসহ আরও নানা উপাদান দিয়ে সেটি গলিয়ে নেন। ডায়াস বানান। এরপর সেটিতে ফুটিয়ে তোলেন নানা ছবি। এ কাজই এখন তাঁর ধ্যানজ্ঞান। জীবন ধারণের জন্য কিছু গ্যালারির সঙ্গে কাজ করেন তিনি, তবে চুইংগাম শিল্পকর্ম নিয়ে না। অনেকেই তাঁকে তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে বলেছেন। তবে তিনি তাতে রাজি হননি। পরিত্যক্ত চুইংগামকে উজ্জ্বল সব শিল্পকর্মে পরিণত করার কাজটা তিনি একাই করতে চান। পৃথিবী আর পরিবেশের কাছে এটাই তাঁর নিবেদন।