মাওবাদীদের নিয়ে কর্মীদের সতর্ক করলেন মমতা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এএফপি
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এএফপি

মাওবাদীদের ফিরে আসা নিয়ে দলের কর্মীদের সতর্ক করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের নেতা–কর্মীদের সাবধান করে তিনি বলেছেন, তৃণমূল দুর্বল হলে মাওবাদীরা ঢুকবে। গতকাল মঙ্গলবার জঙ্গলমহলে বাঁকুড়া জেলার সতীঘাটে এক কর্মী সভায় মমতা এসব কথা বলেন।

পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট জমানার শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী–অধ্যুষিত জঙ্গলমহলের তিন জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জ্বলে উঠেছিল মাওবাদী তৎপরতায়। জঙ্গলমহল থেকে মাওবাদীরা সংঘবদ্ধ হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে। মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় গেরিলা নেতা কিষেণজি মাওবাদীদের সংঘবদ্ধ করেছিলেন বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে।

সেই সময় রাজ্যের বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাওবাদীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাঁর দল ক্ষমতায় এলে মাওবাদীদের সমস্যার সমাধান করবে।

তবে মমতা ক্ষমতা গ্রহণের পর মাওবাদীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি মমতা মানছেন না অভিযোগ তুলে মাওবাদীরা ফের সোচ্চার হয়ে উঠে জঙ্গলমহলে তৎপরতা শুরু করে। মাওবাদীদের নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ নেয় মমতার সরকার। ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় বাহিনী কোবরা ব্যাটালিয়নের সঙ্গে এক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন মাওবাদী নেতা কিষেণজি।

২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জঙ্গলমহলে আশাতীত ফল করেছে। এ ফল থেকে মমতা উপলব্ধি করেন, মাওবাদীরা ফের হুল ফোটাতে পারে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

এসব কথা বিবেচনা করে গতকাল মঙ্গলবার মমতা জঙ্গলমহলে বাঁকুড়া জেলার সতীঘাটে তৃণমূলের এক কর্মী সভায় বলেন, ‘সাবধান থাকবেন ওদের (মাওবাদী) নিয়ে। ওরা সাধুবাবার বেশে এলাকায় ঢুকে মাদুলি দিয়ে ধর্মীয় উগ্রপন্থা ছড়াচ্ছে। এনজিওর নামে ওরা আসাম ও মুম্বাই থেকে উগ্রধর্মীয় সংগঠনের মানুষ আনছে। সবার বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। বলছে, কী লাগবে তাদের। সাবধান, ওদের কথায় ভুলবেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ ধরনের লোক মালদায় গ্রেপ্তার করেছি। ওরা যদি কেউ এসে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এবং প্যান কার্ড চায়, দেবেন না। প্রয়োজনে প্রশাসনকে বলুন। প্রশাসন দেখবে আপনাদের। বাংলায় ওদের (বিজেপি) রক্তের খেলা খেলতে দেব না। ওরা জঙ্গলমহলে রক্তের রাজনীতি শুরু করেছে। তাই বলছি, তৃণমূল দুর্বল হলে আবার মাওবাদীরা আসবে।’

কর্মী সভায় মমতা বলেন, ‘আমি সেই কর্মীকে ভালোবাসি, যে মাটির ঘরে বাস করে। আমি সেই কর্মীদের ভালোবাসি না, যারা নিজেদের কথা ভাবে। আমি সেসব বুথ কর্মীকে ভালোবাসি, যারা বাইসাইকেলে করে বুথে বুথে ঘোরে। তাই বিজেপির অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। ভয় পাবেন না। ওদের মিথ্যে প্রচারের পরের দিন আপনারা মাইক নিয়ে ছুটে যান সেখানে। পাল্টা প্রচার করুন। আর একটা ডায়েরি রাখুন। প্রতিদিন কী কী প্রচার করছে, কোথায় প্রচার করছে, তা লিখে রাখুন।’