করোনাভাইরাসে অসুস্থ ও বয়স্করা ঝুঁকিতে: চীনের গবেষণা

করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা। ছবি: এএফপি
করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা। ছবি: এএফপি

কোভিড-১৯ রোগীদের বিষয়ে প্রথমবারের মতো বিশদ তথ্য প্রকাশ করেছেন চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর ৭০ হাজারেরও বেশি রোগীর তথ্য নিয়ে প্রকাশিত এটাই সবচেয়ে বড় গবেষণা। গতকাল সোমবার প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা।

আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা কেন্দ্রের (সিসিডিসি) তথ্য অনুসারে, ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ রোগীর অবস্থা গুরুতর নয়, হালকা অসুস্থতা। তবে অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি থাকার বিষয়টিও তুলে আনা হয়েছে গবেষণায়। এতে আরও বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এ মোট মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশে মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৯ শতাংশ। আর চীনের বাকি অংশে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।

আজ চীনের দেওয়া সবশেষ তথ্য অনুসারে কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৬৮ এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৭২ হাজার ৪৩৬ জন। গত এক দিনে নতুন করে মারা গেছেন ৯৮ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৮৬ জন। এর মধ্যে শুধু হুবেই প্রদেশে মারা গেছেন ৯৩ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮০৭ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১২ হাজারেরও বেশি রোগী।

গতকাল চীনের জার্নাল অব এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত সিসিডিসির গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, সংক্রমণের ক্ষেত্রে ৮০ দশমিক ৯ শতাংশই লঘু। ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ গুরুতর এবং মাত্র ৪ দশমিক ৭ শতাংশ সংকটাপন্ন। ৮০ এবং এর বেশি বয়সী মানুষের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি—১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ৯ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এরপর থেকে ৩৯ বছর বয়স পর্যন্ত মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। ৪০ বছর বয়সের কোঠায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। ৫০–এর কোঠাদের জন্য ১ দশমিক ৩ শতাংশ, ৬০–এর কোঠাদের জন্য ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ৭০–এর কোঠায় মৃত্যুর হার ৮ শতাংশ।

নারীদের চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর হার বেশি। পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নারীদের ১ দশমিক ৭ শতাংশ।

করোনাভাইরাসে শিশুরা আক্রান্ত হয়নি। ছবি: এএফপি
করোনাভাইরাসে শিশুরা আক্রান্ত হয়নি। ছবি: এএফপি

কোন ধরনের অসুস্থতা কোভিড-১৯ রোগীদের ঝুঁকিতে ফেলছে, সেটাও উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে এক নম্বরে রয়েছে হৃদ্‌রোগ, এরপরই রয়েছে ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের রোগ এবং হাইপারটেনশন।

স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকির ব্যাপারে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩ হাজার ১৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯–এ সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৭১৬টি ঘটনা নিশ্চিত হয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মারা গেছেন ১১ জন। গবেষণার জন্য ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য নেওয়া হয়।

১৩ ফেব্রুয়ারি চীন কোভিড-১৯ নির্ণয় প্রক্রিয়াকে আরও বিশদ করে। এতে ক্লিনিক্যালি রোগ নির্ণয় হওয়া ঘটনাগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর আগে নিশ্চিত আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাগুলো থেকে এটাকে আলাদা করে গণনা করা হতো।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং যত্ন নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচারের কারণে প্রাদুর্ভাব কমা শুরু করে। তবে এতে সতর্ক করা হয় যে অনেক মানুষ ছুটি কাটিয়ে ফিরছে। তাই দেশকে প্রাদুর্ভাবের বৃদ্ধি ঠেকাতে প্রস্তুতি রাখতে হবে।

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর পর শহরটি অবরুদ্ধ করে দেয় চীন সরকার।