সহপাঠীরা খালি খ্যাপায়, তাই সে মরতে চায়

কাডেন বেলস। বুলিংয়ের শিকার এই শিশুর বয়স মোটে ৯ বছর। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
কাডেন বেলস। বুলিংয়ের শিকার এই শিশুর বয়স মোটে ৯ বছর। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ছেলেটির বয়স মোটে নয় বছর। বয়স অনুপাতে বাড়েনি তেমন। এ নিয়ে সহপাঠীরা তাকে ‘বামন’ বলে খ্যাপায়। বুলিং বা টিটকিরির শিকার শিশুটির ছোট্ট মন এই কটুকাটব্য সইতে পারেনি। তার মন এতটাই বিষিয়ে উঠেছে যে এই জ্বালা থেকে বাঁচতে সে মরে যেতে চায়!

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, অস্ট্রেলিয়ায় কাডেন বেলস নামের এই শিশুর কান্নার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। শিশুটির মা ইয়াররাকা বেলস নিজেই এই ভিডিও পোস্ট করেছেন। ওই ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, কেঁদেই চলেছে কাডেন। স্কুলে বুলিংয়ের শিকার হয়েই তার এই কান্না। ওই ভিডিওচিত্রে কাডেন এ-ও বলেছে, এ কারণেই নিজের জীবনের ইতি টানতে চায় সে।

ছেলের কান্নার ভিডিওটি পোস্ট করে ইয়াররাকা বেলস বলেছেন, ‘বুলিং এটাই করে।’ গত মঙ্গলবার ছয় মিনিটের ওই ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের বাসিন্দা ও আদিবাসী বংশোদ্ভূত ইয়াররাকা বলেছেন, তাঁর ছেলেকে প্রায় প্রতিদিনই এমন বুলিংয়ের শিকার হতে হয়। তিনি ভিডিওচিত্রে বলছিলেন, ‘আমি মাত্রই ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে ফিরছি। আজকেও সে বুলিংয়ের শিকার হয়েছে। আমি প্রিন্সিপালকে ঘটনাটি জানিয়েছি। আমি সবাইকে জানাতে চাই, সব মা-বাবা, শিক্ষক—সবাইকে, দেখুন বুলিং এই কাজটাই করে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু হয়। আপনারা কি আপনাদের সন্তান, পরিবার ও বন্ধুদের আচরণের বিষয়ে তালিম দিতে পারেন?’

এ ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার ওই শিশুর পক্ষে তহবিল গঠন করা শুরু হয়েছে। কাডেনকে ডিজনিল্যান্ডে পাঠানোর জন্য ইন্টারনেটের দুনিয়ায় তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গোফান্ডমি নামের ওই পেজে মোট ১০ হাজার ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। এরই মধ্যে তাতে তিন লাখ ডলারের মতো উঠে গেছে।

এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বুলিংয়ের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন তারকা ব্যক্তিত্ব। কাডেনের পক্ষে অভিনেতা হিউ জ্যাকম্যান একটি ভিডিওবার্তা পোস্ট করেছেন। এতে তিনি বলেছেন, ‘কাডেন, তুমি অন্য অনেকের চেয়ে ঢের বেশি শক্তিশালী।’ একই সঙ্গে সবার প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে কাডেনের মা ইয়াররাকা বেলস বলেছেন, ছেলের কান্নার ভিডিওটি তিনি পোস্ট করেছিলেন সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য। তিনি বলেন, ‘বুলিংয়ের কারণে আমরা অনেক মানুষকে হারাচ্ছি। বুলিংয়ের মধ্য দিয়ে বৈষম্যের জন্ম হয়, বর্ণবাদের সৃষ্টি হয়। বুলিংয়ের বহু খারাপ দিক রয়েছে। প্রত্যেক মা–বাবার জন্য সন্তান হারানোর ব্যথা সবচেয়ে কষ্টকর। আর এটিই আমার প্রতিদিনের বাস্তবতা।’ তিনি বলেছেন, বুলিংয়ের কারণে কারও মনে আত্মহত্যার চিন্তা উঁকি দেওয়াও অবাস্তব কিছু নয়।