দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় এক দিনে আক্রান্ত দ্বিগুণ

থাইনাম হাসপাতাল থেকে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত কিছু রোগীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। ছবি: এএফপি
থাইনাম হাসপাতাল থেকে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত কিছু রোগীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। ছবি: এএফপি

চীন থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ছড়িয়েছে ভয়াবহ করোনাভাইরাস। দেশটিতে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা এক দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশটির একটি হাসপাতালে অন্য অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।

তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চীনের কোনো নাগরিকের সঙ্গে বা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।তাই ভাইরাসটি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার ২২৯ জন নতুন আক্রান্তসহ দক্ষিণ কোরিয়ায় এক দিনে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩৩। টেলিভিশনে প্রচারিত জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর’ বলে উল্লেখ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছাং সিই-কান।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একটি হাসপাতাল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শহর থেগুরের ধর্মীয় এক গোষ্ঠীর মধ্যে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

এখন পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় দুজন কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

থেগু ও ছংগদুর কাছাকাছি হাসপাতালটিকে ‘স্পেশাল কেয়ার জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। থেগুরের রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

চীনে এখন পর্যন্ত ৭৬ হাজার ২৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২ হাজার ৩৪৫ জন। এ ছাড়া জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজে ৬০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটিতে নতুন আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ও মৃত্যুর হার এখন কমে আসছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাইরাসটি সংক্রমণের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেইয়েসাস। চীন বা অন্য কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকার পরও এভাবে নতুন আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থার দেশগুলো বিশেষ করে আফ্রিকা এখন বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চীনের বাইরে ২৬টি দেশে ১ হাজার ২০০ এরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং আটজন মারা গেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা গতকাল প্রথমে ১৪২ জনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানান। কয়েক ঘণ্টা পর জানানো হয়, আরও ৮৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

এক বিবৃতিতে কোরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা কেন্দ্র (কেসিডিসি) জানায়, নতুন আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ২২৯। এর মধ্যে ৯৫ জন ছংগদুর থাইনাম হাসপাতালের রোগী। ওই হাসপাতালে বয়স্ক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। হাসপাতালটিতে মোট ১১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০২ জন রোগী এবং নয়জন স্টাফ।

দেশটির উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী কিম গ্যাং-লিপ বলেছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই মানসিক অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে আক্রান্ত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা ছিল না। এর মানে হচ্ছে, তাঁরা কীভাবে ভাইরাসটির সংস্পর্শে এলেন, তা স্পষ্ট নয়।

বার্তা সংস্থা ইয়নহাপ জানিয়েছে, গত বুধবার হাসপাতালটিতে ৬৩ বছর বয়সী একজন মারা যান। গত শুক্রবার আরেকজন রোগী মারা যান বুসানে। দ্বিতীয় রোগীটিকে থাইনাম হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার পর বুসানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ছাং দেশের মানুষকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ যেকোনো বড় আকারের সমবেত হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। ভাষণে তিনি বলেন, সরকার মনে করে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করেছে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ফেস মাস্ক মজুত করে রাখলে বা সদ্য নিষিদ্ধ কোনো সমাবেশে কেউ অংশ নিলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি হুঁশিয়ার করেন।

কেসিডিসি জানিয়েছে, থেগুতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। নতুনভাবে আক্রান্ত হয়েছেন ৬২ জন। এ সম্প্রদায়ের মোট ২৩১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই সম্প্রদায়ের অনুসারীদের বড় একটি অংশ ফাউন্ডার্স ব্রাদারের মৃত্যুতে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শোক সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন।

গত বছরের শেষ দিকে করোনাভাইরাস চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে।