দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে এক দিনে আক্রান্ত ৫৯৪

দক্ষিণ কোরিয়ার থেগু শহরের শিনচেয়নজি চার্চের একটি শাখার সামনের রাস্তা জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ কোরিয়ার থেগু শহরের শিনচেয়নজি চার্চের একটি শাখার সামনের রাস্তা জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ কোরিয়ায় গতকাল শুক্রবার এক দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯৪ জন। দেশটিতে এটাই এক দিনে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট ২ হাজার ৯৩১ জন করোনোভাইরাসের ফলে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়েছেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। তবে প্রাদুর্ভাবটি এখন কেন্দ্র পরিবর্তন করে অন্যান্য দেশেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইতালি।

আজ শনিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, কোরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা কেন্দ্র (কেসিডিসি) আক্রান্ত হওয়ার তথ্য তুলে ধরে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে সেখানে মারা গেছেন ১৬ জন।

আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যার দিক দিয়ে চীনের পরই দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও ওরিগনে অজানা এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার বেশির ভাগই থেগু শহরের। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বের এই শহরকে এখন প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র বলা হচ্ছে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ভুক্ত শিনচেওনজি চার্চের অনুসারীদের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়। মনে করা হচ্ছে, চার্চের আক্রান্ত সদস্যরা থেগুতে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার পর ভাইরাসটি একজন থেকে অন্যজনে ছড়াতে শুরু করে এবং এখন দেশজুড়ে ছড়িয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ৬১ বছর বয়সী এক নারী প্রথম আক্রান্ত হন। তাঁর গত সপ্তাহে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে।

শুরুতে ওই নারী পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যেতে অস্বীকৃতি জানান। জ্বর নিয়ে নিয়ে তিনি চার্চের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। শিনচেওনজি চার্চ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় তাদের দায়ী করে নানা সমালোচনাকে অন্যায় বলে মন্তব্য করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় কোভিড-১৯ রোগীর তথ্য নিশ্চিত করেছে। আক্রান্ত ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাননি বা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শেও ছিলেন না। কর্তৃপক্ষ আক্রান্ত ব্যক্তির নাম–পরিচয় গোপন রেখে জানিয়েছে, তিনি একজন বয়স্ক নারী এবং তিনি নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন।

এর কিছু পরই ওরিগনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তৃতীয় আক্রান্ত ব্যক্তির তথ্য জানান।

গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত ৫৯ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও জনসেবা বিভাগে অজ্ঞাতনামা একটি হুইসেলব্লোয়ার অভিযোগ উঠেছে যে কোয়ারেন্টাইনে (রোগ সংক্রমণের শঙ্কায় পৃথক রাখা) থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সরকারি কর্মীদের যথাযথ নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাঁরা নিরাপদ এলাকা থেকে সেখানে যথেচ্ছ আসা-যাওয়া করছেন।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে মার্কিন স্বাস্থ্য প্রধান আলেক্স আজার।

বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী ৮৩ হাজার ৬৫০ জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৮ হাজার ৯৬১ জন চীনের। সেখানে মারা গেছেন ২ হাজার ৭৯১ জন।

বেলারুশ, লিথুনিয়া, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড ও নাইজেরিয়া তাদের প্রথম আক্রান্তের তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জাপানে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজের এক ব্রিটিশ যাত্রীর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সরকার। এটি যুক্তরাজ্যের প্রথম কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।

ইরানের হেলথ কেয়ার সিস্টেমের সূত্র বিবিসি পারসিয়ানকে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২১০ জন। ইরান সরকারের ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে এটা ছয় গুণ বেশি।