করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব এমন এক জায়গার মধ্যে রয়েছে, যা আগে থেকে চিহ্নিত করা হয়নি। এ কথা বলে সতর্ক করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রতিটি দেশকে নিজ নিজ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে বলেছে। সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গেব্রেইয়েসাস বলেছেন, ভাইরাসটি ‘ব্যতিক্রম’, তবে যথাযথ পদক্ষেপে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর বেশির ভাগই চীনের। গত বছরের ডিসেম্বরে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে। তবে এখন চীনের তুলনায় এর বাইরের দেশগুলোয় নয় গুণ বেশি মানুষ নতুন আক্রান্ত হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গেব্রেইয়েসাস। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা ভাইরাসটিকে ফিরিয়ে দিতে পারব।’ তাঁর মতে, রোগটির চেয়েও বিপজ্জনক হলো নেতিবাচক মনোভাব পোষণ।

কোভিড-১৯–এর সবশেষ অবস্থা তুলে ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, রোগটি বৈশ্বিকভাবে ‘একমুখী রাস্তার’ নয়। রোগটি নিয়ন্ত্রণে দেশগুলো দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিলে সেটিকে পরাস্ত করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘এখন আর কাজ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

চীনের বাইরে ইতালির পরিস্থিতি এখন সবচেয়ে খারাপ। সেখানে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা। গতকাল সোমবার মৃত ব্যক্তির সংখ্যা ৩৪ থেকে এক লাফে বেড়ে ৫২ হয়েছে। চীনে সংক্রমণের হার এখন কমে এসেছে। গত রোববার নতুন করে ২০৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্তের দিক দিয়ে গত ২২ জানুয়ারির পর থেকে এ পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে কম।

প্রতিটি দেশের জন্য টেড্রসের প্রধান পরামর্শ হচ্ছে যেহেতু প্রাদুর্ভাবটি নিয়ন্ত্রণে কোনো একক প্রক্রিয়া নেই, তাই যার যার নিজেদের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে। তিনি বলেন, প্রতিটি দেশের অবশ্যই নিজস্ব তরিকা থাকতে হবে। তবে নিয়ন্ত্রণ দিয়েই সেটা শুরু করতে হবে। ভাইরাসটি অদ্বিতীয়, এর আকৃতি অদ্বিতীয়। তিনি জানান, ৬২ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩৮টি দেশে ১০ জন বা এর কমসংখ্যক আক্রান্ত হয়েছেন। আটটির মতো দেশে গত দুই সপ্তাহে নতুন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। তারা প্রাদুর্ভাবটি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। এত বিপুলসংখ্যক আক্রান্তের পরও তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব চীন সেটি করে দেখিয়েছে। প্রাদুর্ভাবটি প্যানডেমিক (বিশ্বের বড় অঞ্চলজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া) আকার ধারণ করে কি না, সেদিকেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নজর রাখছে বলে তিনি জানান।

ট্রেড্রস বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ইরান এবং জাপান ঘিরে এখন বড় উদ্বেগ রয়েছে। ইরানে সংস্থার একজন কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন, তবে তাঁর অসুস্থতা গুরুতর নয়। তিনি বলেন, ‘নেতিবাচক মনোভাব, সত্যি বলছি, ভাইরাসটির চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। আসুন সত্যিকারভাবে এর ওপর জোর দিই। নেতিবাচক মনোভাব সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ এবং আগে থেকেই অসুস্থ এমন ব্যক্তিরা।

চীনের ৪৪ হাজার আক্রান্তের ওপর করা প্রথমবারের মতো বড় আকারের গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছিল, মধ্যবয়সী ব্যক্তিদের চেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের মৃত্যুর সংখ্যা ১০ গুণ বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী কম অসুস্থতা নিয়ে ভুগেছেন। এতে মৃত্যুর হার ২ থেকে ৫ শতাংশ। প্রতিবছর মৌসুমি জ্বরে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। এই মৌসুমি জ্বর মারাত্মক সংক্রামক। বছরে চার লাখ মানুষ মৌসুমি জ্বরে মারা যায়।