দাঙ্গা নিয়ে লোকসভায় ধাক্কাধাক্কি

ভারতে দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে সরকারের ভূমিকায় চোখে কালো কাপড় বেঁধে তৃণমূলের দুই সাংসদের প্রতিবাদ। গতকাল ভারতীয় পার্লামেন্টের বাইরে।  ছবি: এএফপি
ভারতে দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে সরকারের ভূমিকায় চোখে কালো কাপড় বেঁধে তৃণমূলের দুই সাংসদের প্রতিবাদ। গতকাল ভারতীয় পার্লামেন্টের বাইরে। ছবি: এএফপি

দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে অবিলম্বে আলোচনা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পদত্যাগ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিবৃতির দাবিতে গতকাল সোমবার দিনভর অচল ছিল ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষ। এ নিয়ে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় একপর্যায়ে বিরোধী ও সরকারদলীয় সাংসদদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিও হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার।

নাগরিকত্ব আইন সংশোধন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক তালিকার (এনআরসি) পক্ষে–বিপক্ষের সংঘাত–সংঘর্ষের একপর্যায়ে গত সপ্তাহে দিল্লির একাংশে দাঙ্গা বেধে যায়। চার দিনের এই দাঙ্গায় নিহত হন ৪৬ জন এবং আহত হন প্রায় ৩৫০ জন। এ ছাড়া ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বাড়িঘর, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনায়।

ভারতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে গতকাল। এদিন দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে তিনটি দাবি জানান বিরোধীরা। রাজ্যসভা ও লোকসভা—দুই কক্ষেই বিরোধীরা দাঙ্গা নিয়ে আলোচনার দাবিতে প্রয়োজনীয় নোটিশ জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু লোকসভার স্পিকার ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান সেই দাবি মানেননি। বিরোধীদের দ্বিতীয় দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি। স্পিকার বা চেয়ারম্যান—কেউই প্রধানমন্ত্রীকে বিবৃতি দিতে নির্দেশ দেননি। তৃতীয় দাবি ছিল অমিত শাহর পদত্যাগ। এ দাবিসংবলিত পোস্টারও বিরোধীরা দুই কক্ষে নিয়ে এসেছিলেন। দাবি না মানায় বিরোধী দলের সাংসদেরা ওয়েলে নেমে আসেন। ফলে দুই কক্ষই বেলা দুইটা পর্যন্ত মুলতবি করে দেওয়া হয়। দুইটার পরেও অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে। একটা সময় লোকসভায় সরকার ও বিরোধীপক্ষের সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম হয়। স্পিকার ওম বিড়লা সঙ্গে সঙ্গেই সভা দিনের মতো মুলতবি করে দেন।

লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডু দুজনেরই বক্তব্য এক। দুজনেই বিরোধী সদস্যদের বলেন, দিল্লির দাঙ্গা খুবই উদ্বেগের। অবশ্যই এ নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। কিন্তু এখন সবার উচিত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। এই অবস্থা দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য উপযুক্ত নয়। বিরোধীরা এই যুক্তি মানেননি।

দাঙ্গা নিয়ে সরকার সর্বত্র এই যুক্তির অবতারণা করে যাচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরেই, বিশেষ করে দিল্লির নির্বাচনী প্রচারের সময় শাসক দলের নেতারা লোকখেপানো ভাষণ দিয়েছেন। তাঁদের এই ‘হেট স্পিচ’ (ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য) মানুষকে হিংসাত্মক হতে প্ররোচিত করেছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, সাংসদ পরবেশ সিং ভার্মা, সাবেক বিধায়ক কপিল মিশ্রসহ অনেকের বিরুদ্ধে ভাষণের মধ্য দিয়ে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। দিল্লি দাঙ্গার পর ওই তিনজনের বিরুদ্ধে পুলিশকে অভিযোগ দাখিল করার নির্দেশও দিয়েছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি মুরলিধর।  

লোকসভায় ক্ষমতাসীন দল বিজেপির চিফ হুইপ সঞ্জয় জয়সওয়াল অভিযোগ করেছেন, তিনি কথা বলার সময় কংগ্রেসের সাংসদেরা আগ্রাসীভাবে তাঁর দিকে তেড়ে আসেন। তখন নিজ দলের সাংসদেরা এগিয়ে এলে তাঁদের ধাক্কা দিতে থাকেন কংগ্রেসের সাংসদেরা। এ ঘটনায় কংগ্রেসের সাংসদদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আজ মঙ্গলবার তাঁরা লোকসভায় প্রস্তাব আনবেন।

আর কংগ্রেসের নারী সাংসদ রামিয়া হরিদাস স্পিকার ওম বিড়লার কাছে অভিযোগ করেছেন, বিজেপির নারী সাংসদ জাসকাউর মিনা তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। 

বিরোধীরা সোমবার সংসদ ভবন চত্বরে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির সামনে মৌন বিক্ষোভও দেখান। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও তাতে শামিল হয়েছিলেন। সরকার যে মূক ও বধির, তা বোঝাতে তৃণমূল কংগ্রেস সদস্যরা মুখে-চোখে কালো কাপড় বেঁধে এসেছিলেন।