পশ্চিমবঙ্গের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনা রোগের আগাম সতর্কতা হিসেবে আগামী সোমবার থেকে রাজ্যের সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেন। তবে চলমান উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা যথারীতি রুটিন মাফিক চলবে।

অবশ্য ইতিমধ্যে বহু স্কুল–কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে সেখানের হোস্টেলে থাকা ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাওড়ার শিবপুরের প্রকৌশলী কলেজ, খড়গপুরের আইআইটি–সহ কলকাতার আরও কয়েকটি কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিহার, ওডিশা, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটক, ছত্তিশগড়, রাজস্থানের বহু স্কুল–কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কলকাতা বন্দরে আসা বিদেশিসহ দেশি নাবিকদের করোনাভাইরাস আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। শুরু করা হয়েছে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের। ভারতে এখন পর্যন্ত করোনারভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৮৩ জন।

করোনাভাইরাসের কারণে কাল রোববার থেকে কলকাতা-ঢাকা-খুলনায় চলাচলকারী মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে গতকাল শুক্রবার থেকে কলকাতা-ঢাকার পথে চলাচলকারী বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সড়কপথে এখনো বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসা বাংলাদেশি যাত্রী এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে যাওয়া ভারতীয় যাত্রীরা ফিরে আসতে পারছে নিজ নিজ দেশে। এমনকি কলকাতা থেকে বাংলাদেশের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশেও যেতে পারছে ভারতীয় পাসপোর্টধারী নাগরিকেরা।

আজ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা রবি মহাপাত্র প্রথম আলোকে বলেছেন, কাল রোববার থেকে আগাম ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন।

আজ শনিবার দুপুরে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের ভারতীয় অভিবাসন দপ্তরের কর্মকর্তা কুমার সিং প্রথম আলোকে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা বাংলাদেশিরা এই সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরতে পারছে। আবার বাংলাদেশে যাওয়া ভারতীয় নাগরিকেরাও ফিরে আসতে পারছে এই সীমান্তপথে। এ ছাড়া যেসব ভারতীয় বাংলাদেশের ভিসা পেয়েছে, তারাও যেতে পারছে বাংলাদেশে। তবে তারা সীমান্ত পার হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরই তাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। আবার যেসব ভারতীয় বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসছে, তাদের শরীরে কোনো সন্দেহজনক রোগ ধরা পড়লে তাদের সীমান্তের কোয়ারেন্টিনে ১৫ দিনের জন্য রাখা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে গড়া হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। আজ মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাতটি আইসোলেশন ওয়ার্ডের পরিবর্তে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০টি আইসোলেশন বেড।

এদিকে করোনার আতঙ্কে কলকাতা শহরে পথেঘাটে এখন জনসমাগম কমে গেছে। যানবাহনে যাত্রী সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। স্কুল–কলেজ, শপিং মল, হাটবাজারে মানুষ এখন আসছে কম। বহু এলাকার সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে জানান, বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করেনি। গতকালও ভিসা দিয়েছে। আজ শনিবার এবং কাল রোববার ভিসা অফিস বন্ধ থাকে। তবে তিনি এ কথাও বলেছেন, ভিসা প্রার্থীদের সংখ্যা কমে গেছে। তিনি আরও বলেছেন, যেসব বাংলাদেশি ভারতীয় ভিসা নিয়ে এ দেশে রয়েছেন, তাঁরা সবাই বাংলাদেশে ফিরে যেতে পারবেন।