করোনাভাইরাস-আতঙ্ক: পশ্চিমবঙ্গে পিছিয়ে গেল পৌর নির্বাচন

রাজ্য সচিবালয়ে করোনাভাইরাস নিয়ে বৈঠকের আগে হাত জীবাণুমুক্ত করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
রাজ্য সচিবালয়ে করোনাভাইরাস নিয়ে বৈঠকের আগে হাত জীবাণুমুক্ত করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগামীকাল বুধবার থেকে রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেছে। গতকাল সোমবার বিধানসভা ভবনে অধ্যক্ষের (স্পিকার) কক্ষে এক সর্বদলীয় বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান বিধাসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।

অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশন আসন্ন পৌর নির্বাচন পিছিয়ে ঈদের পর করার ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল রাজ্যের ১০টি রাজনৈতিক দলের এক বৈঠক শেষে এ কথা জানানো হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন থেকে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা পশ্চিমবঙ্গে গতকাল রাজ্য সচিবালয় নবান্নে করোনা নিয়ে এক পর্যালোচনা সভা শেষে জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৮৯৭ সালের ‘দ্য এপিডেমিক ডিজিসেস আইন’ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লক্ষ্য একটাই, পশ্চিমবঙ্গকে করোনার হাত থেকে রক্ষা করা। ভারতের ১৩টি রাজ্যে করোনার রোগী মিললেও এখনো পশ্চিমবঙ্গে করোনায় আক্রন্ত কোনো রোগীর সন্ধান মেলেনি। তাই রাজ্য সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার লক্ষ্যে কার্যকর করেছে এই এপিডেমিক ডিজিসেস আইন।

এই আইনবলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ থাকা বা করোনায় আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যেকোনো ব্যক্তিকে গৃহবন্দী বা কোয়ারেন্টিনে রেখে চিকিৎসা করাতে বাধ্য করা যাবে। এখন দেখা যাচ্ছে, বহু রোগীই চিকিৎসা নিতে বা কোয়ারেন্টিনে থাকতে রাজি হচ্ছে না। আবার কেউ পালিয়েও যাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত যে ১৩টি রাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে, সেগুলো হলো মহারাষ্ট্র (৩২), কেরালা (২৩), হরিয়ানা (১৪), উত্তর প্রদেশ (১৩), দিল্লি (৭), কর্ণাটক (৬), রাজস্থান (৪), লাদাখ (৪), জম্মু ও কাশ্মীর (৩), তেলেঙ্গানা (৩), পাঞ্জাব (১) অন্ধ্র প্রদেশ (১) এবং তামিলনাড়ু (১)। সব মিলিয়ে ১১৪ জন। এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিভিন্ন বাড়িতে নজরদারিতে রেখেছে ৫ হাজার ৫৯৮ জনকে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য সরকার ২০০ কোটি রুপি বরাদ্দও করেছে।

ব্রিটিশ ভারতে ১৮৯৭ সালের ‘দ্য এপিডেমিক ডিজিসেস আইন’ কার্যকর করে ভারতে প্লেগ ও কলেরার মতো রোগ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই আইন কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে। এই আইন অবশ্য ইতিমধ্যে ভারতের আরও ১২টি রাজ্যে কার্যকর হয়েছে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের বার কাউন্সিল ঘোষণা দিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় এই রাজ্যের কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলায় লড়বেন না। বার কাউন্সিল বন্ধ থাকবে। ফলে, কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সব নিম্ন আদালতের বিচার কার্যক্রম। তবে এর আগে কলকাতা হাইকোর্টও নির্দেশ দিয়েছেন, জরুরি মামলা ছাড়া হাইকোর্টে কোনো মামলার শুনানি হবে না। এমনকি নিম্ন আদালতকেও নির্দেশ দিয়েছেন জরুরি মামলা ছাড়া কোনো মামলার শুনানি গ্রহণ না করতে।

এদিকে বিদেশ থেকে, বিশেষ করে করোনায় আক্রান্ত সাতটি দেশ থেকে বিমানে করে কলকাতায় আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য কলকাতার রাজারহাটের চিত্তরঞ্জন ক্যানসার ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই সাতটি দেশ হলো চীন, কোরিয়া, ইতালি, ইরান, ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেন। গতকাল জার্মানি, ফ্রান্স ও স্পেন থেকে কলকাতায় আসা ২৪ জন নারী-পুরুষকে কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য কলকাতা বিমানবন্দর থেকে নিয়ে রাজারহাটের চিত্তরঞ্জন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের দাবি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হলেও কেন তাঁদের সেখানে ১৪ দিন রাখা হবে?