ভারতে করোনায় মৃত্যু আরেকজনের, বন্ধ হলো তাজমহল দর্শন

ভারতে করোনার বলি হলেন আরও একজন। দেশের মধ্যে যে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, মৃত্যু হলো সেই মহারাষ্ট্রে। মারা গেছেন ৬৪ বছরের এক বৃদ্ধ। এদিকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভারত সরকার তাজমহলসহ গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার করোনায় যে বৃদ্ধের মৃত্যু হয় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই তিনি মারা যান। ওই বৃদ্ধ দুবাই থেকে ৮ মার্চ দেশে ফিরেছিলেন।

শুধু ওই বৃদ্ধই নন, করোনায় আক্রান্ত তাঁর স্ত্রী-পুত্রও। তাঁরা চিকিৎসাধীন। এই নিয়ে ভারতে করোনায় মৃত্যু হলো তিনজনের। আগে মৃত্যু হয়েছিল দিল্লি ও কর্ণাটকের দুই বাসিন্দার। দুজনেই বিদেশ ভ্রমণ সেরে দেশে এসেছিলেন। দেশে মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা মঙ্গলবার বেড়ে হয়েছে ১৩৭।

মহারাষ্ট্রে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩৯। উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। মঙ্গলবার এই মৃত্যুর পর জরুরি বৈঠকে বসেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ তোপ। এর আগেই রাজ্য সরকার ঠিক করে, আক্রান্ত লোকজনের মধ্যে যাঁদের গৃহবন্দী থাকতে হবে, তাঁদের প্রত্যেকের বাঁ হাতের কবজি ও আঙুলের গোড়ায় স্ট্যাম্প লাগানো হবে, যাতে সবাই তা দেখে সতর্ক হতে পারেন।
কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন নিজেই নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি কেরালার এক হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে এক চিকিৎসকের বিদেশ যাত্রার খবর হাসপাতাল গোপন রেখেছিল। পরে তাঁর করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।

ভারত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে, সর্দি-কাশি হলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ১০০টি স্বাস্থ্য শিবির খোলা হয়েছে।

সাবধানতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাজমহল, ফতেপুর সিক্রি, আগ্রা ফোর্ট, লাল কেল্লা, কুতুব মিনারসহ দেশের সব দর্শনীয় স্থাপত্য এই মাসের শেষ দিন পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারের পুরাতাত্ত্বিক নিরীক্ষণ বিভাগের (এএসআই) অধীনে মোট ৩ হাজার ৭০০ স্থাপত্য রয়েছে, যেগুলো আপাতত বন্ধ থাকবে। এবার নিয়ে তৃতীয়বার তাজমহল বন্ধ রাখা হচ্ছে। ১৯৭১ সালে প্রথমবার এক সপ্তাহের জন্য তাজমহল বন্ধ ছিল। তারপর ১৯৭৮ সালের বন্যায় তিন দিনের জন্য বন্ধ ছিল। এবার তৃতীয়বার। মহারাষ্ট্র সরকার জানিয়েছে, রাজ্যের সব সংরক্ষিত বনাঞ্চল ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। যাঁরা অগ্রিম বুকিং করেছেন, তাঁরা টাকা ফেরত পাবেন। এ ছাড়া স্কুল, কলেজ, জিম, সুইমিং পুল, রেস্তোরাঁ, মল—বলতে গেলে প্রায় সবকিছুই বন্ধ। করোনার জন্য অর্থনীতি চৌপট হয়ে যাওয়ার জোগাড়। বৈশ্বিক অর্থনীতির কী হাল হতে চলেছে, তার আন্দাজ করা যাচ্ছে না। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ঠিকমতো মোকাবিলা করতে না পারলে আগামী ছয় মাসে দেশের অর্থনীতির হাল দুঃসহ হয়ে উঠতে পারে।

করোনার মোকাবিলায় ভারত সরকার আপাতত যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) ভারতের প্রতিনিধি হেঙ্ক বেকেডাম খুশি। তাঁর মতে, সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর একাগ্রতা ও একনিষ্ঠভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার অঙ্গীকারের সুফল এটা। এই কারণেই ভারত এখনো পর্যন্ত সফল।