মঙ্গলবার থেকে সিডনিসহ ৩ রাজ্যে অচলাবস্থা জারি

অস্ট্রেলিয়ার কিংসফোর্ড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার পর এমন যাত্রীহীন অবস্থায় থাকে বিমানবন্দর। ছবিটি স্থানীয় সময় ২১ মার্চ তোলা। ছবি: রয়টার্স
অস্ট্রেলিয়ার কিংসফোর্ড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার পর এমন যাত্রীহীন অবস্থায় থাকে বিমানবন্দর। ছবিটি স্থানীয় সময় ২১ মার্চ তোলা। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে অচলাবস্থা জারি করেছে দেশটির ফেডারেল সরকার। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এই ঘোষণা দিয়েছেন। ঘোষণা অনুসারে, সোমবার দুপুর থেকে বার, ক্লাব, সিনেমাহল, ব্যায়ামাগার ও প্রার্থনালয় বন্ধ থাকবে। রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে খোলা থাকলেও শুধু কেনা যাবে, সেখানে বসে খাওয়া যাবে না। 

রোববার অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে এই অচলাবস্থার ঘোষণা দেন।

দেশটিতে গত কয়েক দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। রোববার পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৫ জনে পৌঁছেছে। মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের।
সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার প্রধান শহর সিডনির রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসে। এখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩৩ জন। মেলবোর্নের রাজ্য ভিক্টোরিয়ায় ২৯৬ ও ব্রিসবেনের রাজ্য কুইন্সল্যান্ডে ২৫৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

এ দিকে, রাতের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের আগেই অস্ট্রেলিয়ার ৩ গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটোরি রাজ্য আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শাটডাউন করার ইঙ্গিত দেয় রাজ্য সরকারগুলো। ফলে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় মঙ্গলবার থেকে এ ৩ রাজ্যে আপৎকালীন পরিষেবা, সুপারমার্কেট, পেট্রল পাম্প, ওষুধের দোকান, কনভিনিয়েন্স স্টোর, মালামাল সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এবং হোম ডেলিভারি বাদ দিয়ে বাকি সবকিছু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে এ অচলাবস্থা কত দিন চলবে এখনো জানানো হয়নি।

অন্যদিকে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী মরিসন জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে তিনি স্কুল খোলা রাখছেন। কিন্তু অভিভাবকেরা চাইলে সন্তানদের বাসায় রাখতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই না আমাদের সন্তানদের শিক্ষা জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাক। আমরা কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। কিন্তু আমরা জনগণকে লকডাউন করে এখনই নিজ ঘরে অবরুদ্ধ করছি না।’

তবে, গত কয়েক দিন থেকেই রাজ্যগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে লকডাউনের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। অস্ট্রেলিয়ার করোনা সংক্রমণের যে হিসেব সামনে আসছে, তাতে বিশ্ব পরিস্থিতির তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালো থাকলেও গত কয়েক দিনে দ্রুত সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আপাতত বেশি আক্রান্ত নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়াসহ অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটোরি শাটডাউন করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকারগুলো। মঙ্গলবার থেকে অত্যাবশ্যক এবং আপৎকালীন বিষয় ছাড়া যাবতীয় প্রকাশ্য কার্যকলাপ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান শহর সিডনিসহ এই তিনটি রাজ্যে।

নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের প্রিমিয়ার (মুখ্যমন্ত্রী) গ্লাডিস বেরেজিক্লিয়ান বলেন, সুপারমার্কেট, পেট্রল পাম্প, ওষুধের দোকান, কনভিনিয়েন্স স্টোর, মালামাল সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এবং হোম ডেলিভারি এই অচলাবস্থার বাইরে থাকবে। তিনি আরও বলেন, সোমবার স্কুলগুলো খোলা থাকবে তবে সেগুলো অদূর ভবিষ্যতে খোলা থাকবে কিনা সে সম্পর্কে তিনি নতুন ঘোষণা দেবেন।

ভিক্টোরিয়ার প্রিমিয়ার ডেনিয়েল অ্যান্ড্রুজ বলেন, এটা পরিষ্কার, আমরা যদি পদক্ষেপ গ্রহণ না করি তবে আরও বেশি ভিক্টোরিয়ান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবে। আমাদের হাসপাতালগুলোতে চাপ অনেক বাড়বে এবং আরও বেশি ভিক্টোরিয়ান মারা যাবে।
ভিক্টোরিয়া রাজ্যের বিদ্যালয়গুলোর সামনের নির্দিষ্ট ছুটি এগিয়ে আনা হচ্ছে। যেন মঙ্গলবার থেকে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা যায়। ভিক্টোরিয়া ছাড়াও কয়েকটি রাজ্য স্কুল বন্ধ ঘোষণা করার ইঙ্গিত দিয়েছে।