ভাইরাসের পিছে নয়, ছুটতে হবে আগে

ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। এর ছয় দিনের মাথায় মারা যান প্রথম রোগী। তারও ৬ দিন পর, ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশটির ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির সেক্রেটারি নিকোলা জিঙ্গারাত্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘আমাদের এত কিছু বদলানোর দরকার নেই।’ এর ১০ দিন পর তিনিই পোস্ট করলেন আরেকটি ভিডিও। এতে তিনি জানান, তিনি নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। তত দিনে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৬ হাজার, মারা গেছে ২৩৩ জন।

এরপর পার হয়েছে মাত্র ১৫ দিন। কিন্তু এর মধ্যেই যে ভয়ানক বিপর্যয় মোকাবিলা করতে হচ্ছে ইতালিকে, তা ছিল কল্পনার বাইরে। গতকাল রোববার
পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছে ৫ হাজার ৪৭৬ জন, আক্রান্ত হয়েছে ৫৯ হাজার ১৩৮ জন। গতকাল রোববার মারা গেছেন ৬৫১ জন। এ স্রোত কোথায় গিয়ে যে থামবে, বলতে পারছে না কেউ।

কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চীনের বাইরে ছড়ানোর পর সবার আগে এবং এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর সব পদক্ষেপ নিয়েছে ইতালি। পুরো দেশ লকডাউন (অবরুদ্ধ), শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস–আদালত, কলকারখানা—সব বন্ধ। সীমান্ত বন্ধ, বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। রাস্তায় নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। তাহলে প্রশ্ন, এত কিছুর পরও এ অবস্থার মধ্যে পড়তে হলো কেন ইতালিকে? বিষয়টি তাঁদের নীতিনির্ধারকেরা যেমন ভাবছেন, তেমনি ভাবাচ্ছে বিশ্বকে। জানার চেষ্টা হচ্ছে, কোথায় ছিল তাদের ব্যর্থতা, কী শিক্ষা নেওয়া যায় সেখান থেকে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইতালি এত পদক্ষেপ নিলেও সময়মতো নিতে পারেনি। আবার সব পদক্ষেপের মধ্যে সমন্বয়ও ছিল না। তারা প্রথমে কোনো একটি শহরকে লকডাউন করেছে, এরপর করেছে একটি অঞ্চলকে এবং সবশেষে পুরো দেশকে। অর্থাৎ ভাইরাস যত ছড়িয়েছে, তারা তত পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আরও বেশি এলাকাজুড়ে। সব সময় তারা ছুটেছে ভাইরাসের পিছু পিছু। ভাইরাসের আগে যেতে পারেনি।

ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি সান্দ্রা জামপার উপলব্ধিও এখন সে রকম। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা ভাইরাসের পেছনে ছুটছি। আমরা সবকিছু বন্ধ করেছি, তবে তা করেছি একটার পর একটা। ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রও বর্তমানে একই পথে হাঁটছে।’

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ইতালির বাইরে অন্য দেশগুলোর সরকারও একই ভুল করে চলেছে। কঠিন বা অপ্রিয় সিদ্ধান্ত তারা ঠিকই নিচ্ছে, কিন্তু পরে। যে সিদ্ধান্ত আজ নিলে ফল পাওয়া যেতে পারে, তা নিচ্ছে ১০ দিন পর। তত দিনে তারা সর্বনাশ ডেকে নিচ্ছে ঘরে।

সরকারের দিক থেকে এ ক্ষেত্রে একটু অসুবিধাও ছিল। গণতান্ত্রিক দেশ। হুটহাট সব বন্ধ করে মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যায় না। এরপরও সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার সুফল পাওয়া যায়নি আরেকটি কারণে। দেশের মানুষ ঠিকঠাক সরকারি নির্দেশনা মানেনি, পাত্তা দেয়নি।

মিলানের সান রাফায়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত ভাইরাস বিশেষজ্ঞ রবার্তো বুরিওনির মতে, মানুষও মনে করেছে, কী আর এমন হবে। যার যার কাজ করেছে। আজকের এ পরিস্থিতির জন্য দেশের মানুষের এই মানসিকতাও দায়ী।