কলকাতায় করোনা পরীক্ষার কিট-ভিটিএম তৈরির উদ্যোগ

কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

করোনার পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এবার কলকাতায় কিট ও ভিটিএম বা ভাইরাল ট্রান্সপোর্ট মিডিয়া তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন।

করোনার কিট সরবরাহ করে আসছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু কিট সরবরাহ নিয়মিত না হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দপ্তর কলকাতায় কিট ও ভিটিএম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে তারা এই লক্ষ্যে এগিয়েও গেছে।

কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন করোনা পরীক্ষার জন্য তৈরি করেছে উন্নতমানের সর্বাধুনিক গবেষণাগার। এখানেই ভিটিএম ও কিট উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেছেন, ‘আমরা এত দিন ধরে আইসিএমআর বা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ থেকে করোনার পরীক্ষার জন্য কিট ও ভিটিএম পেয়ে আসছিলাম। এখন আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি কলকাতায় করোনার কিট ও ভিটিএম তৈরি করার।’

অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘আইসিএমআর বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে কিট ও ভিটিএম সরবরাহ করে আসছে। এবার আমাদের কেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে কলকাতায়ই এই কিট ও ভিটিএম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় কলকাতা ছাড়াও উত্তরবঙ্গ ও মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন করে গবেষণাগার সাজিয়ে সেখানে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছেন।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানান, সোমবার থেকে পিজি হাসপাতালের পর কলকাতার স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিনে শুরু হবে করোনা রোগের পরীক্ষা। এত দিন কলকাতার কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন নাইসেডে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এন্টেরিক অ্যান্ড কলেরা ডিজিজ) পরীক্ষা হতো করোনার। নাইসেড বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের লালা পরীক্ষা করত। আর নাইসেডে করোনা পরীক্ষার কিট ও ভিটিএম সরবরাহ করত কেন্দ্রীয় সরকার।

নাইসেডের আঞ্চলিক পরিচালক শান্তাদেবী বলেছেন, এখনো নাইসেডে করোনার কিট ও ভিটিএম মজুত রয়েছে। তিনি এ কথাও বলেছেন, করোনার ভাইরাস পরীক্ষা করা হয় তিনটি পর্যায়ে। ফলে এই পরীক্ষার খরচ অত্যধিক। তিন পর্যায়ের এই পরীক্ষার জন্য যে কিট ও ভিটিএম প্রয়োজন হয়, তার মূল্য সাড়ে চার হাজার রুপি। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারকে এই ভিটিএম ও কিট সরবরাহ করছে ভারতের দুটি সংস্থা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় কলকাতা ছাড়াও উত্তরবঙ্গ ও মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন করে গবেষণাগার সাজিয়ে সেখানে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের চারটি বেসরকারি হাসপাতাল ও একটি ল্যাবকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই চার হাসপাতাল ও ল্যাবে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো থাকায় মূলত তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতাল, ফর্টিস হাসপাতাল, মেডিকা হাসপাতাল, নিউ টাউনের সুরক্ষা ও সল্টলেকের এসআরএল ল্যাবরেটরি। এই চার হাসপাতাল ও ল্যাবে করোনার পরীক্ষা করার জন্য কিট এলেই শুরু করা হবে করোনার ভাইরাস পরীক্ষা।

আইসিএমআর জানিয়েছে, দুটি সংস্থা অ্যালতনা ডায়াগনস্টিক ও পুনের মাই ল্যাব করোনা কিট দিচ্ছে। এই দুটি সংস্থা কোভিড-১৯-এর নমুনা ১০০ শতাংশ পজিটিভ বা নেগেটিভ বলতে পারছে।

মাই ল্যাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা সপ্তাহে এক লাখ পর্যন্ত কিট সরবরাহ করতে পারবে।

বিশ্বের সঙ্গে অনেকটা পাল্লা দিয়ে এখন ভারতেও বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৩ জন। আর মারা গেছেন ৬ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২২। মৃতের সংখ্যা ১৬। আর পশ্চিমবঙ্গে মৃতের সংখ্যা ১। আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১০।

করোনা আক্রমণ ঠেকাতে ২৫ মার্চ থেকে ভারতজুড়ে শুরু হয়েছে লকডাউন। তবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন অমান্য করার বহু ঘটনা ঘটেছে প্রতিদিন।