করোনা পরীক্ষার কিট বানালেন, এরপর সন্তানের জন্ম দিলেন

বিজ্ঞানী মিনাল দাখেভে ভোঁসলে। ছবিটি তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
বিজ্ঞানী মিনাল দাখেভে ভোঁসলে। ছবিটি তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

এক শ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারতে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিট নেই বলে কড়া সমালোচনা চলছিল। এর মধ্যেই সাফল্যের দেখা পেল দেশটি। প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ ভারতে তৈরি কোনো কিট শতভাগ নির্ভুল ফল পাওয়ার সাফল্য দেখিয়েছে। এই সাফল্য এসেছে একজন নারী বিজ্ঞানীর হাত ধরে। তাঁর নাম মিনাল দাখেভে ভোঁসলে। তিনি মহারাষ্ট্রের পুনের মাইল্যাব ডিসকোভারির গবেষণা ও উন্নয়ন প্রধান। তিনি একজন ভাইরোলজিস্ট, ভাইরাস নিয়ে কাজ তাঁর।

প্রথম ভারতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাইল্যাব করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য কিট বানিয়ে বাজারজাত করার অনুমতি পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তাদের কিট বাজারে পৌঁছে গেছে। প্রথম চালানে প্রতিষ্ঠানটি পুনে, মুম্বাই, দিল্লি, গোয়া ও বেঙ্গালুরুতে ১৫০টি কিট পাঠিয়েছে।

মাইল্যাবের চিকিৎসাবিষয়ক পরিচালক গৌতম ওংকারে গতকাল শুক্রবার বিবিসিকে বলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি ও সি এবং অন্যান্য অসুখের পরীক্ষার জন্য কিট বানিয়ে থাকে। তারা এক সপ্তাহে এক লাখ কিট সরবরাহ করতে পারবে। প্রয়োজন হলে সপ্তাহে দুই লাখ কিট দেওয়ার সক্ষমতা তাদের আছে। মাইল্যাবের একেকটি কিট দিয়ে ১০০টি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। একেকটি কিটের দাম পড়বে ১ হাজার ২০০ রুপি। ভারত এমন একেকটি কিট বিদেশ থেকে ৪ হাজার ৫০০ রুপি দিয়ে কিনেছে। সেই হিসাবে মাইল্যাবের কিট সাশ্রয়ী।

বিজ্ঞানী মিনাল ভোঁসলে বলেন, তাঁদের কিট দিয়ে আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই ফল পাওয়া সম্ভব। আমদানি করা কিটগুলো দিয়ে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করে ফল পেতে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লাগছে। কীভাবে তিনি ও তাঁর দল এই কিট উৎপাদনে সাফল্য পেলেন, তার বর্ণনা দিলেন। তাঁর ভাষায়, এমন কিট বানাতে সাধারণত তিন মাস থেকে চার মাস সময় লেগে যায়। কিন্তু তাঁরা এটা রেকর্ড সময়ে করেছেন। এটি তৈরিতে সময় লেগেছে মাত্র দেড় মাস।

এই তাড়ার পেছনে ছিল মিনালের ব্যক্তিগত একটি কারণও। তিনি ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। এই মাসেই তাঁর সন্তান জন্ম দেওয়ার তারিখ ছিল। তিনি চাইছিলেন সন্তান জন্ম দেওয়ার আগেই কাজটি শেষ করতে। গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা কাজ শুরু করেন। দেড় মাসের মধ্যেই সাফল্য পান।

সাফল্যের বিষয়ে এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘একটা জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হলো। আমি এই সময়ে দেশের জন্য কিছু করার চ্যালেঞ্জটা নিলাম। আমাদের ১০ জনের দলটি কঠোর পরিশ্রম করেছে এই সাফল্য পেতে।’ ১৮ মার্চ তিনি কিটটি পর্যালোচনা করার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে (এনআইভি) জমা দেন। পরের দিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন এবং ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে বাণিজ্যিক অনুমোদনের জন্য লিখিত প্রস্তাব পাঠান তিনি। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি হাসপাতালে যান। সেখানে অস্ত্রোপচারে তাঁর কন্যাসন্তান হয়। আর যে কিটের জন্য এতটা পরিশ্রম করেছেন, সেটিও দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছে গেছে। তা দিয়ে করোনাভাইরাসের পরীক্ষাও শুরু হয়েছে।