জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরিকল্পনা নেই জাপানের

জাপান সরকারের প্রধান মুখপাত্র ইয়োশিহিদে সুগা আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরিকল্পনা করছে না। রাজধানীতে লকডাউন জারির চিন্তা এ মুহূর্তে সরকারের মাথায় নেই।

টোকিওতে গত কয়েক দিনে করোনার সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার হার ক্রমাগত বাড়ার মুখে সপ্তাহান্তে এ রকম গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে সোমবার থেকে সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেবে। কঠোর পদক্ষেপের মধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং রাজধানীতে লকডাউন হতে পারে। তবে মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য, চিফ কেবিনেট সেক্রেটারির আজকের এই মন্তব্য আপাতত সে রকম জল্পনার অবসান ঘটাবে। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে সরকার কোন পথে অগ্রসর হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না জাপানের নাগরিক সমাজ।

তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপের ঘোষণা সুগা না দিলেও জাপানের নেতৃস্থানীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বিদেশিদের জাপানে প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরও কঠোর করার মতো কিছু পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করবে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ লাগামহীনভাবে বেড়ে চলায় বিদেশি পর্যটকদের জাপানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। জাপানের নাগরিক নন, জাপানে আসা সে রকম যেকোনো যাত্রী গত দুই সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত দেশে গিয়ে থাকলে তাঁদেরও জাপানে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

এদিকে টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকে আজ সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা তিনি করবেন। গভর্নর কোইকেও লকডাউনের সম্ভাবনার উল্লেখ করেননি। যদিও গত সপ্তাহে তিনি বলেছিলেন, রাজধানীবাসী সপ্তাহান্তে নিজেদের স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী করে না রাখতে পারলে তাঁকে সেই পথে অগ্রসর হতে হবে। সপ্তাহান্তে বাইরে না যাওয়ার জন্য তাঁর জানানো আবেদনে রাজধানীবাসী সাড়া দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, সপ্তাহে কাজের দিনগুলোতেও একই ধরনের সাড়া তিনি শহরবাসীর কাছ থেকে প্রত্যাশা করছেন। তিনি আবারও প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে রাতের বেলা বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে রোববার টোকিওতে নতুন ৬৮টি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ায় জাপানের রাজধানীর হিসাব এখন ঊর্ধ্বমুখী। এর বাইরে জনপ্রিয় কমেডি অভিনেতা ও গায়ক কেন শিমুরার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার খবর প্রচারিত হওয়ায় নাগরিক সমাজে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক বেড়েছে। প্রবীণ এই কমেডিয়ান ১৯৭০-এর দশকে জনপ্রিয় রক সংগীত ব্যান্ড ড্রিফটার্সরের সদস্য হিসেবে জাপানের বিনোদন জগতে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে কমেডি চরিত্রে বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে জাপানিদের মধ্যে খুবই পরিচিত এক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে চলতি মাসের ২০ তারিখে হাসপাতালে ভর্তি হলে মারাত্মক ধরনের নিউমোনিয়ার লক্ষণ শনাক্ত হওয়ার পর ভেন্টিলেটরে তাঁকে রাখা হয়েছিল। সে রকম অবস্থায় তাঁর দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত করা হয় এবং রোববার হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। ৭০ বছর বয়সী এই জনপ্রিয় অভিনেতা হলেন জাপানে তারকা সমাজের মধ্যে প্রথম করোনাভাইরাসের শিকার।

এর বাইরে জাপানের জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় গতোকু সাকাইয়ের ভাইরাস পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার খবর দিয়েছে জাপানের সংবাদমাধ্যম। জে-লিগের ভিসেল কোবের এই তারকা খেলোয়াড় জ্বর নিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রে উপস্থিত হলে আজ তাঁর দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে।

আজ রোববার পর্যন্ত জাপানে চিহ্নিত করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সংখ্যা ১৯০০-র কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং ৫৬ জন এ পর্যন্ত মারা গেছেন। উভয় হিসাবে অবশ্য প্রমোদতরি ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৭১২টি সংক্রমণের ঘটনা এবং ১২টি মৃত্যু অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

মারাত্মক পরিণতির দিকে জাপানের অর্থনীতি
এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হিসাবের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় কিছুটা ভালো অবস্থান জাপান বজায় রেখে চললেও দেশের অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা ও উদ্বেগ বেড়ে চলেছে। ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিক স্থগিত হওয়া অর্থনীতির ওপর বড় আঘাত হয়ে দেখা দিচ্ছে। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অলিম্পিকের আয়োজনকে সামনে রেখে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের পথে যাওয়ায় হঠাৎ করে অলিম্পিক পিছয়ে যাওয়া এদের জন্য এখন ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন করে তুলছে। এর বাইরে আবার বিদেশি পর্যটকের জাপান আগমন শূন্যে নেমে আসায় হোটেল, গাইডেড ট্যুর, রাত্রিকালীন বিনোদন ও পরিবহন ব্যবসাকেও দেউলিয়া হয়ে পড়ার মতো ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে। পাশাপাশি লকডাউন আতঙ্ক এবং ঘরের বাইরে না যেতে সরকারের জানানো অনুরোধ ভোক্তা ব্যয় সংকুচিত করে দেওয়ায় খুচরা বিক্রির ওপর ব্যাপক প্রভাব এটা ফেলছে। অর্থনীতি ও অর্থ বাজারের বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ সবকিছুর সার্বিক প্রভাবে জাপানের অর্থনীতিতে আবারও মন্দা দেখা দেওয়া অসম্ভব কিছু নয় এবং অর্থনীতি ভবিষ্যতে ৭ শতাংশের কাছাকাছি সংকুচিত হতে পারে।

অর্থনীতির এসব হিসাবে সরকারও উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এ কারণেই শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে আর্থিক সংকট এড়িয়ে যেতে বিশাল অঙ্কের থোক সহায়তা পরিকল্পনার ঘোষণা দেন। উদ্দীপনা থোকের জন্য তহবিল জোগানোর উদ্দেশ্য জাপান সরকার জুলাই মাস থেকে প্রায় ২৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের সরকারি বন্ড বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করছে। জাপানকে তা সন্দেহাতীতভাবেই আরও বেশি ঋণভারে জর্জরিত করে তুলবে। তবে এর বাইরে অর্থ সংগ্রহের বিকল্প পথ সরকারের সামনে এখন আর খোলা নেই।