করোনাভাইরাস চিকিৎসায় চীনের নতুন অগ্রগতি

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় চীনা বিজ্ঞানীরা সম্ভাব্য ওষুধ খুঁজতে গিয়ে কার্যকর অ্যান্টিবডির সন্ধান পেয়েছেন। তাঁদের আলাদা করে ফেলা এসব অ্যান্টিবডি নতুন করোনাভাইরাসকে কোষে প্রবেশে বাধা দেওয়ার বেলায় অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। এ উদ্ভাবন কোভিড-১৯ চিকিৎসা বা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রমাণিত কার্যকর কোনো চিকিৎসা নেই। চীনে গত বছরের ডিসেম্বরে উৎপত্তির পর থেকে এখন সারা বিশ্বে মহামারিতে রূপ নিয়েছে। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ৮ লাখ ৫৭ হাজার মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪২ হাজার মানুষ মারা গেছে।

বেইজিংয়ের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাং লিংকি বলেন, তাঁর দলের সন্ধান পাওয়া অ্যান্টিবডির মতো অ্যান্টিবডি দিয়ে তৈরি ওষুধ বর্তমান পদ্ধতির চেয়ে অধিক কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটিকে তিনি ‘বর্ডারলাইন’ বা ‘সীমান্তরেখা’ বলছেন। এর আগে এ রকম প্লাজমা বা রক্তরস পদ্ধতিতে চিকিৎসা করার নজির রয়েছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ইয়ান লিপকিন করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতি হিসেবে ‘ব্লাড-প্লাজমা থেরাপি’র কথা বলেন। তাঁর দাবি, নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে প্লাজমা থেরাপি। এ চিকিৎসাপদ্ধতিকেও আশার আলো হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্লাজমায় অ্যান্টিবডি থাকে, তবে রক্তের ধরন দ্বারা এটি সীমাবদ্ধ।

এর আগে জানুয়ারি মাসের শুরুতে ঝাং ও তাঁর গবেষক দল শেনঝেনে থার্ড পিপল হাসপাতালে করোনাভাইরাসে সেরে ওঠা রোগীদের রক্তে অ্যান্টিবডি বিশ্লেষণ শুরু করেন। তাঁরা ২০৬টি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি পৃথক করেন যার ভাইরাসের প্রোটিনের সঙ্গে আবদ্ধ হওয়ার একটি জোরালো ক্ষমতা রয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঝাং বলেন, অ্যান্টিবডি পৃথক করার পর তাঁরা আরও একটি পরীক্ষা চালান। এ পরীক্ষায় অ্যান্টিবডি ভাইরাসকে কোষে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারে কি না, তা দেখা হয়। প্রথম ২০ বা ততোধিক অ্যান্টিবডির মধ্যে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ৪টি অ্যান্টিবডি ভাইরাসের প্রবেশ ঠেকিয়ে দেয়। এর মধ্যে দুটি খুব ভালোভাবে কাজ করতে পারে।

গবেষকেরা এর পর থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি শনাক্ত করেন এবং এগুলোকে সংযুক্ত করে করোনাভাইরাসের পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে চেষ্টা করছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগ্রহী ওষুধ নির্মাতারা এটি নিয়ে পরীক্ষা করতে পারবেন। প্রথমে পশু ও পরে মানুষের ওপর এটি প্রয়োগ করা হবে।

গবেষক দলটি ইতিমধ্যে বায়োটেক ফার্ম ব্রি বায়োসায়েন্সের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে।

গবেষক ঝাংয়ের দাবি, কয়েক দশক ধরে অ্যান্টিবডিগুলোর গুরুত্ব প্রমাণিত হয়েছে। ক্যানসার চিকিৎসা বা সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসায় এর প্রয়োগ করা হয়েছে। অ্যান্টিবডি কোনো ভ্যাকসিন নয়, তবে ঝুঁকিপূর্ণ লোকদের রোগপ্রতিরোধের জন্য দেওয়া যেতে পারে।